পাকিস্তানি স্নায়ুবিজ্ঞানী ড. আফিয়া সিদ্দিকী অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মার্কিন কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে। তার মুক্তির তদবিরে যুক্তরাষ্ট্র সফরকারী প্রতিনিধি দলের সদস্য ড. ইকবাল জাইদি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ জানিয়েছে, উগ্রবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫২ বছর বয়সী ড. আফিয়া সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে তার নির্দোষ হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
উগ্রবাদ ও ‘লেডি আল কায়েদা’ নামক অভিযোগ
ড. আফিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আল কায়েদার নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ এবং উগ্রবাদে সম্পৃক্ততার। এ অভিযোগের কারণে তাকে ‘লেডি আল কায়েদা’ নামেরও আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। তবে নতুন তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, মামলাটি ভিন্ন মোড় নিতে পারে।
ড. আফিয়া তার আইনজীবীর মাধ্যমে স্কাই নিউজকে বলেছেন, আমি নির্দোষ। তবুও প্রতিনিয়ত অন্যায়ের শিকার হয়েছি। আমাকে নিত্যনতুন নির্যাতন করা হয়েছে। এটি সহজ ছিল না। তবে আমি আল্লাহর রহমতের ওপর আশাবাদী। একদিন অবশ্যই এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাব।
ক্ষমার আবেদনপত্র
তার আইনজীবী ক্লাইভ স্ট্যাফোর্ড স্মিথ জানান, ড. আফিয়া সিদ্দিকীর পরিবার বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে ক্ষমার আবেদন করেছেন। ৭৬ হাজার ৫০০ শব্দের একটি বিশদ আবেদনপত্র প্রেসিডেন্টের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে স্কাই নিউজ জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে স্বাধীনভাবে তথ্য যাচাই করতে পারেনি।
বাইডেন ইতোমধ্যে ৩৯ জনকে ক্ষমা করেছেন এবং ৩ হাজার ৯৮৯ জনের সাজা কমিয়েছেন। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তার হাতে রয়েছে।
গোয়েন্দা ত্রুটি এবং অভিযোগের ভিত্তি
আইনজীবী স্মিথ দাবি করেন, গোয়েন্দা সংস্থার ত্রুটিপূর্ণ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আফিয়াকে অভিযুক্ত করা হয়। তিনি বলেন, গোয়েন্দারা ভেবেছিলেন, ড. আফিয়া পরমাণু বিজ্ঞানী এবং তেজস্ক্রিয় বোমা তৈরির সঙ্গে জড়িত। এতে তারা ভয় পেয়ে যান এবং তাকে উগ্রবাদীদের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করেন। অথচ তিনি ছিলেন একজন স্নায়ুবিজ্ঞানী।
স্মিথ আরও জানান, ড. আফিয়া ২০০৩ সালে পাকিস্তান সফরের সময় অপহরণের শিকার হন। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী গোয়েন্দা সংস্থা (আইএসআই) তাকে তার তিন সন্তানসহ তুলে নিয়ে যায় এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর হাতে হস্তান্তর করে। পরে তাকে আফগানিস্তানের বাগরাম বিমান ঘাঁটিতে রাখা হয়।
মার্কিন আদালতের সিদ্ধান্ত
২০১০ সালে মার্কিন আদালতে ড. আফিয়ার বিচার সম্পন্ন হয়। আদালত বলেছিল, ২০০৮ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার আগে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। তবে আইনজীবীরা দাবি করেন, আফিয়া সিদ্দিকীকে গোপনে তুলে আনা হয়েছিল এবং তার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে।
মুক্তি নিয়ে আশাবাদ
ড. আফিয়ার মুক্তি নিয়ে পাকিস্তানি ও আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা চলছে। আইনজীবী স্মিথ জানিয়েছেন, এই মামলাটি অত্যন্ত জটিল। তবে সাম্প্রতিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা আশাবাদী, ড. আফিয়া ন্যায়বিচার পাবেন এবং শিগগিরই মুক্তি মিলবে।
মার্কিন বিচার বিভাগ এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে পাকিস্তানি প্রতিনিধি দল, মানবাধিকার সংগঠন ও আফিয়ার পরিবার তাকে মুক্ত করতে আশাবাদী। এটি সফল হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে।
মন্তব্য করুন