পাকিস্তানের রাজনীতি এখন এক অস্থিতিশীল সময়ে প্রবাহিত হচ্ছে, আর এর পেছনে এক নাম ‘বুশরা বিবি’। ইমরান খানের স্ত্রী, যিনি বর্তমানে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রধান মুখ হয়ে উঠেছেন, দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন।
বুশরা বিবির নেতৃত্বে পিটিআই সমর্থকরা ইসলামাবাদে বিশাল প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজনের জন্য সমাবেত হয়েছেন। পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল পিটিআই, যার নেতৃত্বে আছেন ইমরান খান। বর্তমানে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি এবং নির্বাচনী অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন চালাচ্ছে দলটি।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) ডি-চক অভিমুখে রোড মার্চের একপর্যায়ে দেওয়া বক্তব্যে বুশরা বলেন, তিনি ইমরান খান না আসা পর্যন্ত ডি-চক ছেড়ে যাবেন না। প্রতিজ্ঞা করুন, ইমরান খান আমাদের সঙ্গে না আসা পর্যন্ত আপনি ডি-চক ছেড়ে যাবেন না, বলে তিনি আন্দোলনকারীদের উৎসাহিত করেছেন। খবর জিও নিউজ।
তিনি বলেন, যখন আমরা একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, তখন কেন আমাদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হচ্ছে? বুশরা বিবি যোগ করেন, আপনারা কী জানেন না, খান সত্য এবং ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছেন? বুশরা বিবির এই মন্তব্য রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে এবং আন্দোলনকে আরও দৃঢ় করেছে।
এর আগে ইমরান খানের মুক্তি এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে পিটিআই’র হাজার হাজার কর্মী ইসলামাবাদ শহরের কেন্দ্রস্থল, ডি-চক এলাকায় সমবেত হয়েছেন। এ এলাকা বর্তমানে এক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিবাদকারীরা সড়ক অবরোধ করে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে বার বার। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করছে, তবে সহিংসতা এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
ডি-চক, যা ইসলামাবাদের অত্যন্ত সুরক্ষিত রেড জোন এরিয়া হিসেবে পরিচিত, এখন প্রতিবাদ ও আন্দোলনের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। পিটিআই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছে, পুলিশের গুলিতে দলের তিনজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে পাঞ্জাবের মুলতান, রাজানপুর, গুজরাট, দেরা গাজি খানসহ অন্যান্য শহরেও।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা পিটিআই নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি জানিয়েছেন, সহিংসতার পেছনে ‘গোপন ষড়যন্ত্র’ রয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ বুশরা বিবিকে দোষারোপ করেছেন। তিনি দাবি করেন, বুশরা বিবির লক্ষ্যই হলো প্রতিবাদকে সহিংস করে তোলা এবং জনগণকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া। এছাড়া, বিক্ষোভকারীদের অনেককে অর্থের বিনিময়ে আনা হয়েছে এবং অন্যের সন্তানদের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, এমনও অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, বুশরা বিবির নেতৃত্বে পিটিআই’র প্রতিবাদ এখন তীব্র সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে। সরকার-বিরোধী প্রতিবাদ যখন শুরু হয়, তখনই পিটিআই ইমরান খানের মুক্তি এবং তাদের নির্বাচনী অধিকার পুনরুদ্ধারের দাবি তোলেছিল। সরকারের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হলেও প্রতিবাদকারীরা রাজপথ ছাড়তে প্রস্তুত নন এখন।
অপরদিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন নিরাপত্তা কর্মী নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং রেঞ্জার্স সদস্যরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছেন, তবে সহিংসতা বাড়ছে, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।
এমন পরিস্থিতিতে, বুশরা বিবির নেতৃত্বে পাকিস্তান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ডুবে গেছে, যা সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলের সংঘর্ষকে আরও তীব্র করেছে। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে এবং এই উত্তাল পরিস্থিতি কবে শান্ত হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কি বুশরা বিবির হাতে?
মন্তব্য করুন