পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি এবং বোন আলিমা খান সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন, যা পাকিস্তানি রাজনীতির একটি পুরোনো প্রবণতাকে নতুন করে উন্মোচন করেছে। পাকিস্তানের রাজনীতি পরিবার-নির্ভর হওয়ায়, ইমরানের এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই তার পূর্বের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক হিসেবে দেখছেন।
ইমরান খান বহুবার পাকিস্তানের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারগুলোর, বিশেষ করে শরিফ পরিবার, নারীদের রাজনীতিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার কৌশলের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু এখন, তিনি নিজেই তার স্ত্রী ও বোনকে রাজনীতির মঞ্চে আনছেন, যা তার পূর্বের বক্তব্যের সাথে একেবারে বিপরীত।
ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি, যিনি মূলত একজন আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন, এখন পিটিআই দলের বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন এবং প্রকাশ্যে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। অন্যদিকে, আলিমা খান, যিনি এতদিন দলের পেছনে কাজ করেছেন, বর্তমানে তিনি দলের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
পাকিস্তানে পরিবারের নারীরা বহুবার রাজনৈতিক দায়িত্ব নিয়ে রাজনীতিতে ভূমিকা পালন করেছেন, বিশেষ করে সংকটময় সময়ে।
ফাতিমা জিন্নাহ : কায়েদ-ই-আজম মহম্মদ আলি জিন্নাহর বোন, যিনি ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামের পর সামরিক শাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
বেনজির ভুট্টো : পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রতিষ্ঠাতা জুলফিকার আলি ভুট্টোর কন্যা, যিনি তার পিতার মৃত্যুর পর দলটির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং প্রথম মুসলিম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কুলসুম নওয়াজ : নওয়াজ শরিফের স্ত্রী, যিনি তার স্বামীর কারাবাসের সময় রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এছাড়া, বুশরা বিবি এবং আলিমা খানের রাজনীতিতে প্রবেশ করাও অনেকের মতে এক ধরনের অপরিহার্যতা। বর্তমানে পিটিআই দলের শীর্ষ নেতারা বা তো কারাগারে বা আত্মগোপনে রয়েছেন, ফলে দলকে টিকিয়ে রাখতে এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বুশরা এবং আলিমার এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বুশরা বিবি সম্প্রতি পিটিআই দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সমর্থকদের উদ্দেশ্যে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন। এর ফলে রাজনৈতিক মঞ্চে তার উপস্থিতি নতুন মাত্রা পেয়েছে। এদিকে, আলিমা খানও রাজনীতির মূলধারায় আসার মাধ্যমে দলের নেতৃত্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
তাদের এই পদক্ষেপ অনেকের কাছে ‘পরিস্থিতির চাপ’ হিসেবে মনে হলেও, কিছু বিশ্লেষক এটিকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন। পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সরকারের নিপীড়নমূলক নীতির প্রেক্ষাপটে, বুশরা ও আলিমা খানকে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে।
ইমরান খানের সমালোচকরা বলছেন, তিনি যে পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তা এখন তার নিজের দলের কর্মকাণ্ডে পুরোপুরি পরিবর্তিত হয়েছে। তবে পিটিআই সমর্থকরা এই সিদ্ধান্তকে সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণের বিরুদ্ধে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
বুশরা বিবি এবং আলিমা খানের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পাকিস্তানের রাজনৈতিক ঐতিহ্যের একটি ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখা যেতে পারে, তবে ইমরান খানের অতীত বক্তব্যের সাথে তার বর্তমান পদক্ষেপের মধ্যে কিছু অমিল রয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, তাদের এই নতুন ভূমিকা ইমরান খানের রাজনৈতিক আন্দোলনে নতুন দিক উন্মোচন করবে, না কি দলীয় ক্ষোভ ও বিভক্তি আরও বাড়াবে? সেটা সময়ই বলে দেবে।
মন্তব্য করুন