বিশ্বের সবচেয়ে দামি মসলাগুলোর একটি জাফরান। আকাশ ছোঁয়া দামের কারণে এই মসলাকে বলা হয়- রেড গোল্ড বা লাল সোনা। প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদের (সা.) বাণীতেও জাফরান প্রসঙ্গ এসেছে।
উন্নতমানের এক কেজি জাফরানের মূল্য সর্বোচ্চ ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৫ লাখ টাকারও বেশি।
বেশ কিছু কারণে জাফরানের দাম এত বেশি। প্রথমত এর আহরণ প্রক্রিয়া বেশ জটিল। প্রাচীন পদ্ধতিতে হাতের মাধ্যমে ফুল থেকে জাফরান সংগ্রহ করা হয়।
কেন জাফরানের দাম এত বেশি, ছোট একটি উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। মাত্র ১ পাউন্ড বা ৪৫৩ গ্রাম জাফরান পেতে প্রয়োজন ১ লাখ ৭০ হাজার ফুল।
দামি এই মসলা নিয়ে গবেষণা করছেন, ইউনিভার্সিটি অব ভার্মন্টের গবেষক আরাশ গালে। তিনি বলেন, বেশ কিছু জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই মসলা চাষ করতে হয়। খেত থেকে ফুল সংগ্রহ, ফুল থেকে কাঠি বের করে আনা এবং সেগুলো শুকিয়ে জাফরান বানানোর প্রতিটি ধাপ হাতের মাধ্যমে করতে হয়। এত বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের প্রয়োজন।
অতিমূল্যবান এই মসলার বাজারে একক আধিপত্য উপসাগরীয় দেশ ইরানের। একাই বিশ্বের ৮০ শতাংশ জাফরান উৎপাদন করে থাকে এই ইসলামিক প্রজাতন্ত্র। আর বিশ্বের সবচেয়ে ভালো মানের জাফরান পাওয়া যায় আরেক মুসলিম দেশ আফগানিস্তানে।
২০১৯ সালে ২৫০ টন জাফরান উৎপদন করেছিল ইরান। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা দাঁড়ায় প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।
ইরান ছাড়াও ভারত, স্পেন, গ্রিস, মরক্কো, ইতালি, আজারবাইজান, তুরস্ক ও আফগানিস্তানে চাষ হয় মহামূল্যবান এই মসলা। তবে ইরানের তুলনায় তাদের উৎপাদিত জাফরানের পরিমাণ খুবই কম।
ক্যান্সার মোকাবিলা, হার্টের উপকার, ত্বকের উজ্বলতা বৃদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে দারুণ কার্যকরী এই মসলা। ঔষধীগুণেও সমৃদ্ধ এটি। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে আগুন রঙা এই জাফরান।
জাফরান সম্পর্কে নবী সা. যা বলেছেন
সুনানে আবু দাউদে উল্লেখ রয়েছে- প্রখ্যাত সাহাবি হজরত বুরাইদা রা. বলেন, আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে আকিকার সময় নবজাতকের মাথার চুল ফেলে দেওয়া হতো। এরপর সেই নবজাতকের মাথায় আকিকার পশুর রক্ত লাগিয়ে দেওয়া হতো।
কিন্তু নবী সা. বলেছেন, তোমরা পশুর রক্ত লাগানো বন্ধ করে দাও এবং সেখানে রঙ মাখো। সবচেয়ে ভালো হলো জাফরানের রঙ। হাদিসটি নবী (সা.)-এর মেয়ে ফাতিমা (রা.) থেকেও বর্ণিত হয়েছে।
মন্তব্য করুন