ওপেক (OPEC) হচ্ছে পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর একটি আন্তঃসরকারি সংস্থা, যার পূর্ণ নাম ‘অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিস’। এর সদস্য মোট ১৩টি দেশ।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বাগদাদে প্রথম পাঁচ সদস্য (ইরান, ইরাক, কুয়েত, সৌদি আরব ও ভেনেজুয়েলা) নিয়ে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৫ সাল থেকে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় এর সদরদপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যদিও অস্ট্রিয়া ওপেক সদস্যভুক্ত দেশ নয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৩টি সদস্য দেশ বিশ্বব্যাপী তেল উৎপাদনের আনুমানিক ৪৪ শতাংশ এবং বিশ্বের ‘প্রমাণিত’ তেলের রিজার্ভের ৮১.৫ শতাংশের মতো সংগ্রহ করে। ফলে ওপেক বিশ্বব্যাপী তেলের দামের ওপর একটি বড় প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছিল।
এ সংস্থার লক্ষ্য হলো এর সদস্য দেশগুলোর পেট্রোলিয়াম নীতিগুলোর সমন্বয় ও একীকরণ করা, তেলের বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা যাতে ভোক্তাদের কাছে পেট্রোলিয়ামের একটি দক্ষ, অর্থনৈতিক এবং নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি তেল উৎপাদনকারী দেশের একটি স্থিতিশীল আয়ের উৎস তৈরি করা এবং পেট্রোলিয়াম শিল্পে বিনিয়োগকারীরা যেন তাদের মূলধনের ওপর ন্যায্য রিটার্ন পায়।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠিত হয়। ওপেকের বর্তমানে সদস্য দেশ ১৩টি—অ্যাঙ্গোলা, আলজেরিয়া, ইরাক, ইরান, ইউএই, কুয়েত, নাইজেরিয়া, ভেনেজুয়েলা, লিবিয়া, সৌদি আরব, গ্যাবন, ইকুয়েটোরিয়াল ও গিনি। ইন্দোনেশিয়া ২০০৮ সালে ওপেক থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি কাতার এবং ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি ইকুয়েডর সদস্যপদ ছেড়ে দেওয়ার কারণে এ সংস্থার সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ১৩। সারা পৃথিবীতে তেলের দাম নির্ধারণ, রপ্তানি ও আমদানিতে বেশ গুরুত্ব বহন করে ওপেক।
সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পরস্পরকে বাণিজ্যিক সুবিধা দিয়ে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের এক বিশাল এলাকা গড়ে তোলাই ওপেকের উদ্দেশ্য। ওপেকের গঠন প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর জাতীয় সার্বভৌমত্বের দিকে মোড় ঘুরিয়েছে এবং ওপেকের সিদ্ধান্তগুলো বিশ্বব্যাপী তেলবাজার এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রভাবগুলো বিশেষত শক্তিশালী হতে পারে যখন যুদ্ধ বা নাগরিক ব্যাধি সরবরাহে বর্ধিত বাধা সৃষ্টি করে। ১৯৭০-এর দশকে তেল উৎপাদনে বিধিনিষেধের ফলে তেলের দাম এবং ওপেকের উপার্জন ও সম্পদে নাটকীয় বৃদ্ধি ঘটে, বৈশ্বিক অর্থনীতির দীর্ঘস্থায়ী ও সুদূরপ্রসারী পরিণতি ঘটে। ১৯৮০-এর দশকে ওপেক তার সদস্য দেশগুলোর জন্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ শুরু করে; সাধারণত লক্ষ্যমাত্রা কমে গেলে তেলের দাম বেড়ে যায়। সংস্থাটির ২০০৮ ও ২০১৬ সালের ওভারসাপ্লাই ট্রিম করার সিদ্ধান্ত থেকে এটি সম্প্রতি ঘটেছিল।
ওপেকের মহাসচিব হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ সানুসি বারকিন্দো (নাইজেরিয়া)।
মন্তব্য করুন