শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৩ পিএম
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

তারেক রহমানকে নিয়ে দ্য উইকের প্রচ্ছদ স্টোরি ‘নিয়তির সন্তান’

তারেক রহমান। ছবি : সংগৃহীত
তারেক রহমান। ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি বৃটিশ সাপ্তাহিক ‘দ্য উইক’ তাদের কাভার স্টোরিতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে ঘিরে একটি বিশদ বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম ছিল "Destiny’s Child"—বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় “নিয়তির সন্তান”। লেখিকা নম্রতা বিজি আহুজা তার প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন এক প্রবাসী রাজনৈতিক নেতার সংগ্রাম, আশাবাদ, চ্যালেঞ্জ ও নেতৃত্বের প্রত্যাশা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ ১৬ বছর পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফেরার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। লন্ডনে নির্বাসিত জীবন কাটানো এই নেতার ঢাকা ফেরাকে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন শুধু একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়—এটি হতে পারে বাংলাদেশে নতুন এক রাজনৈতিক যুগের সূচনা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের নানা চাপে বিএনপি বারবার ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় থাকলেও, তারেক রহমানের ভার্চুয়াল নেতৃত্বে দল এখনো ঐক্যবদ্ধ। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে দল যখন রাজনৈতিকভাবে নতুন একটি যাত্রার পথে, তখন তার ফেরাকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে একটি নবজাগরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

তারেক রহমানের জন্ম রাজনীতির আলো-আঁধারিতে। তিনি স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের দুই প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব—প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া—এর পুত্র। জিয়া স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির জনক হিসেবে বিবেচিত। ১৯৮১ সালে সেনাবাহিনীর একটি অভ্যুত্থানে তার মৃত্যু হয়। এরপর খালেদা জিয়া দলের দায়িত্ব নেন এবং নব্বইয়ের দশকে শেখ হাসিনার সঙ্গে মিলেই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এরশাদ সরকারের পতন ঘটান।

তারেক রহমান প্রথম সরাসরি রাজনীতিতে নাম লেখান ১৯৮৮ সালে। তবে দলীয় কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্যভাবে সক্রিয় হন ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে, যখন বিএনপি নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। এই সময়েই তিনি হয়ে ওঠেন দলের ‘দ্বিতীয় কেন্দ্রবিন্দু’।

২০০৭ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে এবং দুর্নীতির অভিযোগে তারেককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি প্যারোলে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান—যেখান থেকে শুরু হয় তার দীর্ঘ রাজনৈতিক নির্বাসন।

লন্ডনে অবস্থানকালে তারেক রহমান সরাসরি রাজনীতিতে না থাকলেও, বিএনপির প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তেই তার ভূমিকা ছিল স্পষ্ট। ২০০৯ সালের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তিনি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, এবং ২০১৬ সালে পুনর্নির্বাচিত হন। এরপর মায়ের কারাবরণের প্রেক্ষাপটে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ সংকট এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একাধিকবার দল ভাঙার চেষ্টা সত্ত্বেও, তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দল আজও সংগঠিত রয়েছে।

তারেক রহমানের উপদেষ্টাদের মতে, এবার আর শুধু নেতৃত্ব নয়—একটি সুসংগঠিত ভিশন নিয়েই ফিরতে চান তিনি। তার উপদেষ্টা মাহদী আমিন জানিয়েছেন, ‘তারেক রহমান বাংলাদেশে এমন একটি রাজনৈতিক কাঠামো গড়তে চান, যেখানে গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও উন্নয়ন থাকবে অভিন্ন সূত্রে গাঁথা।’

বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ও তারেকের আরেক উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, ‘আমরা এমন একটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো তৈরি করতে চাই, যেখানে প্রতিটি নাগরিক সমান সুযোগ ও ন্যায্যতা পাবে—হোক সে কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী, নারী কিংবা তরুণ প্রজন্ম।’

সমর্থকরা বিশ্বাস করেন, দেশের রাজনীতিতে আজ প্রয়োজন একটি ‘বিকল্প শক্তি’র—যেটি গণতন্ত্র, জবাবদিহিতা ও সমতা নিশ্চিত করতে পারে। অন্যদিকে সমালোচকরা মনে করেন, তারেক এখনো তার অতীতের বিতর্কগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। বিশেষ করে দুর্নীতির মামলাগুলো এখনো ঝুলে আছে, এবং তাকে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে যদি তিনি দেশে ফেরেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আসিফ বিন আলী বলেন, ‘তারেক রহমান এখন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি টার্নিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি চাইলে হতে পারেন নতুন রাজনৈতিক দিগন্তের স্থপতি, আবার চাইলে তার পূর্বসূরিদের ভুলও পুনরাবৃত্তি করতে পারেন।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে এক জটিল, কিন্তু সম্ভাবনাময় মোড়ে দাঁড়িয়ে। এই মুহূর্তে তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধু বিএনপি নয়, গোটা দেশের ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে—তিনি কি পারবেন নিজেকে অতীত থেকে আলাদা করে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে? পারবেন কি এক নতুন রাজনৈতিক চর্চা শুরু করতে, যেখানে জনগণের দাবি-দাওয়াই হবে প্রধান মুখ্য বিষয়?

সব উত্তর এখন সময়ের হাতে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত—তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন এখন আর কেবল একটি রাজনৈতিক গুঞ্জন নয়, এটি হয়ে উঠেছে একটি জাতীয় প্রত্যাশা, শঙ্কা ও সম্ভাবনার মিশ্র প্রতিফলন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পুলিশের গুলিতে দৃষ্টিশক্তি হারানো ছাত্রদলের দুই নেতার পাশে তারেক রহমান

‘আমি কথা বলতে চাই’─ আইনি নোটিশ প্রসঙ্গে তাসনিম জারা

চাঁদাবাজদের রুখে দেওয়ার ঘোষণা ছাত্র অধিকার পরিষদের

সাবেক এপিএসের বিষয়ে মুখ খুললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

মাদ্রাসা শিক্ষককে রাজকীয় বিদায়, উপহার পেলেন ওমরা প্যাকেজ

পাঁচ বছরে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে অন্তত ৩৫ প্রাণহানি

খায়রুল হক, নূরুল হুদা, রকিবউদ্দীনরা এখনো কেন গ্রেপ্তার হচ্ছে না, প্রশ্ন রিজভীর

‘এ বছর ডিএনসিসি এলাকায় ৫ লাখ গাছ লাগানো হবে’  

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরিণতি কী হবে?

লিগ ভাগ্য নির্ধারণে কুমিল্লায় মুখোমুখি আবাহনী-মোহামেডান

১০

আ.লীগের সময়ে হিন্দুদের জমি বেশি দখল হয়েছে : দুলু

১১

পারভেজ হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানীতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল

১২

ছোট কামড়, বড় হুমকি / ম্যালেরিয়া নির্মূলে বাংলাদেশের অগ্রগতি কতদূর?

১৩

ব্যবসায়ীর ১০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেন যুবদল নেতা

১৪

ভারতকে ছাড় দিতে নারাজ পাকিস্তান, চূড়ান্ত জবাবের প্রস্তুতি

১৫

আসিফ নজরুল ও হারুন ইজহারের সাক্ষাৎ কাশ্মীর হামলার পরে কি?

১৬

নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন মামলার রায় কার্যকরের দাবিতে সড়কে স্বজনরা

১৭

‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ চালুর দাবিতে রেলপথ অবরোধ

১৮

ডিসেম্বরে ঢাকায় বসছে এটিজেএফবি ইন্টারন্যাশনাল ম্যারাথন

১৯

৩৪তম বিসিএস অল ক্যাডারের সভাপতি জয়, সম্পাদক জুয়েল

২০
X