কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৬:৫১ পিএম
আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৬:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

গুতেরেসের পরিচয়

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ছবি : সংগৃহীত
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ছবি : সংগৃহীত

চার দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেল ৫টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি।

এ সময় বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতিসংঘ মহাসচিব সরাসরি হোটেলে যাবেন।

জানা গেছে, আগামীকাল শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকাল ৯টায় মহাসচিবের অবস্থানরত হোটেলে প্রথমে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টার অফিসে যাবেন গুতেরেস। সেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে বাণিজ্যিক একটি ফ্লাইটে কক্সবাজারে যাবেন তিনি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা তার সফরসঙ্গী হবেন। কক্সবাজারে তাদের স্বাগত জানাবেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।

আন্তোনিও গুতেরেস ১৯৪৯ সালে ৩০ এপ্রিল পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই তার শৈশবকাল অতিবাহিত হয়। তার বাবা ভার্জিলিও ডায়াস গুতেরেস ও মাতা ইল্দা কান্ডিডা দে অলিভেইরা।

তিনি স্বনামধন্য লিসিও দে ক্যামোসে (বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়) পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে ১৯৬৫ সালে স্নাতকধারী হন। দেশের সেরা ছাত্র হিসেবে প্রিমিও ন্যাশিওনাল দোস লিসেয়াস পদক জয় করেন। এরপর পদার্থবিজ্ঞান, তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনার জন্য ইনস্টিউটো সুপেরিয়র টেকনিকোতে অধ্যয়ন করেন। ১৯৭১ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর সিস্টেম তত্ত্ব এবং টেলিযোগাযোগ সংকেত বিষয়ে সহকারী অধ্যাপকরূপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মময় জীবন শুরু করেন।

১৯৭৪ সালে সমাজতান্ত্রিক পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে গুতেরেসের। অল্পকিছুদিন পরই তিনি অধ্যাপনা পেশা পরিত্যাগ করেন। এরপর তিনি পূর্ণাঙ্গকালীন রাজনীতিবিদে পরিণত হন। ১৯৭৪ সালের ২৫ এপ্রিল সংঘটিত কার্নেশন বিপ্লবের মাধ্যমে কাইতানোর একনায়কতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটে। এরফলে গুতেরেস সোশ্যালিস্ট পার্টির লিসবন অংশের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন। দলীয় নেতৃত্বের অন্যতম হিসেবে গুতেরেস ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালে শিল্পসচিব, ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত লিসবন ডেপুটি ও পরবর্তীতে কাস্তেলো ব্রাঙ্কো পৌর এলাকা থেকে পর্তুগিজ জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। এ সময় অনেকগুলো সংসদীয় কমিশনের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ১৯৮৮ সালে জর্জ স্যাম্পাইয়ো’র স্থলাভিষিক্ত হয়ে সমাজতান্ত্রিক পার্টির দলীয় নেতৃত্বে ছিলেন।

১৯৯২ সালে তিনি সমাজতান্ত্রিক পার্টির মহাসচিব নিযুক্ত হন এবং আনিবাল কাভাকো সিলভা সরকারের প্রতিপক্ষীয় নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সেপ্টেম্বর, ১৯৯২ সালে সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনালের সহসভাপতি হিসেবে মনোনীত হন।

১৯৯৫ সালে কাভাকো সিলভা মন্ত্রিসভার সময়কাল শেষ হবার পর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সোশ্যালিস্ট পার্টি জয়লাভ করে ও তিনি পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী হন। তার পূর্বসূরীর তুলনায় পৃথক থেকে সমাজের সকলস্তরের মানুষের সঙ্গে সংলাপ ও আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সরকার পরিচালনায় অগ্রসর হন। এরফলে তিনি তার সরকারের প্রথম বছরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। পর্তুগালে বাজেট ঘাটতি কমিয়ে অর্থনৈতিক কল্যাণের দিকে ধাবিত হয় ও নতুন শর্তারোপে নগদ অর্থ স্থানান্তরের কার্যক্রম গ্রহণ করে। এ ছাড়াও লিসবনে এক্সপো ’৯৮-এর আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন হয় যা পর্তুগালকে বিশ্বের কাছে আরও উন্মোচিত করে।

১৯৯৯ সালে তিনি পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০০ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতিত্ব করেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে তার সরকার তেমন সফলতা পায়নি। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দা ও হিঞ্জ রাইবেইরো সেতু দুর্যোগের ফলে তার কর্তৃত্ব ও জনপ্রিয়তা বহুলাংশে খর্ব হয়। ডিসেম্বর, ২০০১ সালে স্থানীয় নির্বাচনে সোশ্যালিস্ট পার্টির বিপর্যয়কর ফলাফলের প্রেক্ষিতে গুতেরেস পদত্যাগ করেন।

তিনি বলেন যে, ‘আমি রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বে নিপতিত দেশকে রক্ষার স্বার্থে পদত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছি।’ রাষ্ট্রপতি জর্জ স্যাম্পাইয়ো সংসদ ভেঙ্গে দেন ও নির্বাচন আহ্বান করেন। তৎকালীন সামাজিক নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী এডুয়ার্ডো ফেরো রড্রিগুয়েজ সোশ্যালিস্ট পার্টির দলীয় নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন। কিন্তু, ২০০২ সালের সাধারণ নির্বাচনে হোসে ম্যানুয়েল ডুরাও বারোসো’র সামাজিক গণতান্ত্রিক পার্টির কাছে পরাজিত হয়। পর্তুগিজ রাজনীতি থেকে গুতেরেস অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনালের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

২০০৫ সালের মে মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ থেকে গুতেরেসকে শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার নির্বাচিত করা হয়। হাইকমিশনার হিসেবে তিনি বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃত্ব দেন ও মেয়াদকাল শেষ হওয়া পর্যন্ত বিশ্বের ১২৬ দেশে কর্মরত ১০,০০০ কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করেন। পাশাপাশি ৬০ মিলিয়ন শরণার্থী, প্রত্যাবর্তনকারী, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত লোক ও রাষ্ট্রবিহীন ব্যক্তিকে সহায়তায় এগিয়ে আসেন।

২০০৭ সালে এনপিআরের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি মন্তব্য করেন, ইরাকি শরণার্থীদের দুর্দশার বিষয়টি ১৯৪৮ সালের পর মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাধিক শরণার্থী সঙ্কট ছিল। দুর্বলভাবে শরণার্থী সঙ্কটের বিষয়ে প্রচার করা হলেও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রেও কম সমস্যার সৃষ্টি করেনি। হাইকমিশনার হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদকালে তিনি সিরীয় গৃহযুদ্ধের শিকার শরণার্থীদের কাছে আন্তর্জাতিক সাহায্যের বিষয়টি নিশ্চয়তার বিধান করেন। লেবানন ও জর্ডানের ন্যায় দেশগুলোয় শরণার্থী সঙ্কট অস্তিত্বের প্রশ্ন ছিল। তাদের বেঁচে থাকার বিষয়ে অতিরিক্ত সাহায্যের কথাও তুলে ধরেন তিনি। ২০০৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ পর্যন্ত জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্বপালন করেন তিনি। অক্টোবর, ২০১৬ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ তাকে জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব হিসেবে ঘোষণা করে। তিনি বান কি মুনের স্থলাভিষিক্ত হন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কারখানায় ‘ভূত’ আতঙ্ক, অসুস্থ ১৫

জনগণের শক্তিতেই ক্ষমতায় আসবে বিএনপি: নীরব

বরখাস্তকৃত এসপির হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ

ছাত্র-শিক্ষক সবাই মিলে একটি পরিবার হয়ে থাকতে চাই : জবি উপাচার্য 

ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেল দুই যুবকের

সিরিয়ার রাজধানীতে ইসরায়েলের বিমান হামলা

ত্রিমুখী আন্দোলনে উত্তাল নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

আধিপত্য বিস্তারে প্রবাসীকে কুপিয়ে হত্যা

হিযবুত তাহরীরের ৯ জন রিমান্ডে, কারাগারে ১৩

এনসিপিকে গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের আহ্বান ফারুকের

১০

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশ, অবশেষে সেই মহসিনকে প্রত্যাহার

১১

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড / সাবেক চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান

১২

নাটোরে বিএনপি নেতার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ

১৩

ঢাবির প্রলয় গ্যাংয়ের মামলায় আসামি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী, ‘মা’ কারাগারে 

১৪

উখিয়ায় সংরক্ষিত বন থেকে বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার

১৫

গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক লাকির মৃত্যুর খবর নিয়ে যা জানা গেল

১৬

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান : রহমাতুল্লাহ

১৭

খুলনায় হাত-পা বাঁধা যুবকের লাশ উদ্ধার

১৮

ড্যাব পরিচালিত হবে নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে

১৯

ছাত্রলীগ নেতা কাউসার গ্রেপ্তার

২০
X