চার দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেল ৫টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
প্রায় সাত বছরের মাথায় জাতিসংঘ মহাসচিবের দ্বিতীয় দফা সফর নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। মূলত তার এই সফরে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট এবং মানবাধিকারের প্রসঙ্গ বেশি অগ্রাধিকার পাবে বলে জানা গেছে।
জাতিসংঘের মৌলিক মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মহাসচিব গুতেরেস বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাজে বিশ্বাসী। তাই তিনি পবিত্র রমজান মাসে মুসলমানদের মতো রোজা পালন করবেন। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে এক লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের সঙ্গে তিনি এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইফতার করবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও আলোকপাত করতে পারেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এ ছাড়া জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন তাদের প্রতিবেদনে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে প্রায় ১৪০০ মানুষ মারা যাওয়ার তথ্য দিয়েছে। ফলে এমন হত্যাকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতার প্রসঙ্গও আনতে পারেন জাতিসংঘ প্রধান।
এ বিষয়ে কী বার্তা তিনি দেবেন সেটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আগামী শনিবার (১৫ মার্চ) সিভিল সোসাইটির সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকটিকে তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়া আন্তর্জাতিক মহলের প্রত্যাশা। গুতেরেস একই প্রত্যাশার কথা বলতে পারেন বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘ থেকে কারিগরি সহযোগিতার আশ্বাস দিতে পারেন গুতেরেস।
এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর নিয়ে বুধবার (১২ মার্চ) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ঘটনার কারণে রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গটি ধামাচাপা পড়ে গেছে। প্রফেসর ড. ইউনূস চাচ্ছেন, এই বিষয়টিকে সবার কাছে হাইলাইট করতে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস উনার (জাতিসংঘ মহাসচিব) সফরের ফলে রোহিঙ্গা বিষয়টি আবার বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসবে।
প্রেস সচিব বলেন, আমরা আশা করছি উনি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ভালো একটি ম্যাসেজ দিবেন। আমরা চাই রোহিঙ্গারা তাদের সম্মান নিয়ে নিজের দেশে যাতে ফিরে যেতে পারে। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের টপ প্রাইরোটি। আপনারা জানেন রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহায়তা অনেক হ্রাস পেয়েছে। আমরা আশা করছি জাতিসংঘ মহাসচিবের আগমনে এই সহায়তা আরও বৃদ্ধি পাবে।
জানা গেছে, আগামীকাল শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকাল ৯টায় মহাসচিবের অবস্থানরত হোটেলে প্রথমে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টার অফিসে যাবেন গুতেরেস। সেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে বাণিজ্যিক একটি ফ্লাইটে কক্সবাজারে যাবেন তিনি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা তার সফরসঙ্গী হবেন। কক্সবাজারে তাদের স্বাগত জানাবেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
মন্তব্য করুন