যখন তারা পিঁপড়ার উপত্যকায় আসল তখন একটি পিঁপড়া বলল, ওহে পিঁপড়ার দল! তোমাদের বাসস্থানে ঢুকে পড়, যাতে সুলাইমান ও তার সৈন্যবাহিনী তাদের অগোচরে তোমাদেরকে পিষে না ফেলে। তারপর সুলাইমান পিঁপড়ার কথায় মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আমার রব, তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছ তার জন্য আমাকে তোমার শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দাও। আর আমি যাতে এমন সৎকাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর। আর তোমার অনুগ্রহে তুমি আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর। সুরা আন-নামল। আয়াত-১৮-১৯।
আল্লাহ তায়লা তার ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র মাখলুকের ব্যাপারেও অবগত। তাই পবিত্র কোরআনে সুরা আন নামলে এভাবেই পিঁপড়াদের কথোপকথন সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ক্ষুদ্র এই প্রাণী নিয়ে কয়েক বছর আগেও অনেক কিছুই জানতেন না বিজ্ঞানীরা। তাই পবিত্র কোরআনকে অসার প্রমাণ করতে একদল বিজ্ঞানী পিঁপড়ার জীবন-পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। গবেষণার একপর্যায়ে তারা পিঁপড়া সম্পর্কে কোরআনের নির্ভুল ও নিখুঁত তত্ত্বজ্ঞান দেখে অবাক হয়ে যান।
মানুষের মতোই পিঁপড়ার সমাজ, সংসার ও রাষ্ট্রব্যবস্থা রয়েছে। নিজস্ব বাজার এবং উন্নতমানের যোগাযোগ ব্যবস্থাও রয়েছে তাদের। তারা খাবার সঞ্চয় করে। আবার পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে শীতের দিন তা রোদে শুকাতে দেয়। মানুষের মতোই পিঁপড়াদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ ঘটে এবং চরম প্রতিশোধপরায়ণও হয়ে থাকে তারা। পিঁপড়ামানব খ্যাত ড. ই ও উইলসনের ভাষায়, পিঁপড়ারা মানুষের মতোই তাদের মৃতদেহ নির্দিষ্ট স্থানে রেখে আসে। এই কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট কর্মী বাহিনীও রয়েছে তাদের।
কোরআনের আয়াত থেকে আমরা জানতে পারি পিঁপড়ারা শব্দ করে কথা বলে। কয়েক বছর আগেও বিজ্ঞানীরা ভাবতেন পিঁপড়া কোনো শব্দ করতে পারে না এবং তাদের শব্দ শোনার ক্ষমতা নেই। কিন্তু সম্প্রতি আবিষ্কার হয়েছে কিছু প্রজাতির পিঁপড়া খুব অল্প ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ ব্যবহার করে আশপাশের পিঁপড়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। পিঁপড়াদের যোগাযোগব্যবস্থার আরেকটি প্রক্রিয়া হলো ফেরোমন। যোগাযোগের জন্য স্পর্শকেও ব্যবহার করে পিঁপড়া। এটা হয় অ্যান্টেনা আর প্রথম জোড়া পায়ের মাধ্যমে। অ্যান্টেনা-অ্যান্টেনাতে স্পর্শের মাধ্যমেও এরা পরস্পর পরস্পরকে চিনতে পারে।
পিঁপড়া নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানতে পেরেছেন তাদের সমাজ নারীপ্রধান। অর্থাৎ কাজবাজ থেকে শুরু করে প্রজনন সবই তাদের কাজ। রানি পিঁপড়ার জন্য খাবার সংগ্রহ করে নারী পিঁপড়া। আর সেই খাবার এবং রানিকে পাহারা দেয় পুরুষ পিঁপড়া। অর্থাৎ পুরুষরা সৈনিক আর নারীরা শ্রমিক। খাদ্য সংগ্রহ অথবা বাইরের কোনো কাজে নারী পিঁপড়ারা যখন ব্যস্ত ছিল, ঠিক তখনই সোলায়মান (আ.) এবং তার বাহিনী এসে পড়ে। তখন একটি নারী পিঁপড়া সবাইকে নিজ নিজ ঘরে প্রবেশ করার নির্দেশ দেয়। নির্দেশের ধরন থেকে বোঝা যায় এটি রানি পিঁপড়া ছিল। তবে এটা অন্য নারী পিঁপড়াও হতে পারে।
আগাম বিপদসংকেতও বুঝতে পারে পিঁপড়া। আর সে অনুযায়ী নিজেদের বাঁচানোর জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থাও নেয় তারা। ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় লাল পিঁপড়ার ওপর তিন বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, তারা আগেই বিপদ বুঝতে পেরেছে। আল্লাহ তায়ালা কোরআনেও সে কথাই বলেছেন। পিঁপড়ারা সোলায়মান (আ.)-এর আগমন এবং বিপদসংকেত বুঝতে পেরেছিল। তখন হাজার হাজার পিঁপড়া থেকে শুধু একটি নারী পিঁপড়া এ নিয়ে সতর্ক করে দেয়।
মন্তব্য করুন