সারা বছরই মহাকাশে কিছু না কিছু ঘটেই চলেছে। তবে কিছু ঘটনা এমন হয়, যেগুলো বহু বছর বা বহু যুগ পর একবার ঘটে। এমনই এক বিরল মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হচ্ছে বিশ্ববাসী। পৃথিবী থেকে একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে সৌরজগতের ৭টি গ্রহ। জোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় প্ল্যানেটারি প্যারেড বা গ্রহের কুচকাওয়াজ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে টানা তিনদিন সূর্যাস্তের পর এই দৃশ্য দেখা যাবে। এরপর ২০৪০ সাল পর্যন্ত এমন দৃশ্য অবলোকনের সুযোগ পাবেন না এ গ্রহের বাসিন্দারা।
সৌরজগতের যে সাত গ্রহ এককাতারে এসেছে সেগুলো হলো মঙ্গল, বৃহস্পতি, ইউরেনাস, শুক্র, নেপচুন, বুধ ও শনি। এর মধ্যে বুধ, শুক্র, বৃহস্পতি ও মঙ্গল গ্রহ দেখা যাবে খালি চোখে। দিগন্তের নিম্নরেখায় অবস্থান করার কারণে খালি চোখে শনি গ্রহ দেখা হবে কঠিন। আর ইউরেনাস ও নেপচুনকে দেখতে হলে প্রয়োজন হবে টেলিস্কোপের।
মেঘমুক্ত আকাশ থাকলে এ দৃশ্য ভালোভাবে দেখা যাবে। তবে এককাতারে সাত গ্রহের দেখা মিলবে খুবই অল্প সময়ের জন্য। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে শনি ও বুধও অস্ত যাবে বলে এই দুই গ্রহের দেখা পাওয়াটা হবে কঠিন।
লন্ডনভিত্তিক রয়্যাল অবজারভেটরি গ্রিনউইচের জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড ব্লুমার বলেন, এক সারিতে ৭টি গ্রহের দেখা পাওয়ার এ এক বিরল সুযোগ। এ দৃশ্য দেখার জন্য সূর্যাস্তের পর কয়েক মিনিট মাত্র সময় পাওয়া যাবে। কারণ, এরপরই তারা দিগন্তে মিলিয়ে যাবে। সূর্যাস্তের পরও শুক্র, বৃহস্পতি ও মঙ্গল-এই তিন গ্রহকে বেশ খানিকটা সময় ধরে দেখা যাবে।
পৃথিবীসহ আমাদের সৌরজগতের আটটি মূল গ্রহ একই কক্ষপথে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে থাকে। তবে তাদের প্রদক্ষিণ করার গতি ভিন্ন ভিন্ন হয়। সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ বুধ ৮৮ দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে থাকে। অর্থাৎ গ্রহটিতে ৮৮ দিনে ১ বছর হয়।
আবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন। আর নেপচুনের সময় লাগে ৬০ হাজার ১৯০ দিন। অর্থাৎ নেপচুন গ্রহের এক বছরের মানে হলো পৃথিবীর প্রায় ১৬৫ বছর।
গ্রহগুলোর গতি ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় কখনো কখনো কিছু গ্রহ সূর্যের একই পাশে সারিবদ্ধ হয়ে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। গ্রহগুলো যদি সূর্যের ডান দিকে থেকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে, তখন সেগুলো পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান হয়। অর্থাৎ আমরা রাতের আকাশে একসঙ্গে কয়েকটি গ্রহকে দেখতে পাই। তবে মাঝেমধ্যে বিরল ঘটনা ঘটে। এই সময় সব কটি গ্রহ এমনভাবে একই রেখায় অবস্থান করে যে এগুলোকে একসঙ্গে পৃথিবী থেকে দেখা যায়।
বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি—এই পাঁচ গ্রহ পৃথিবী থেকে খালি চোখে দৃশ্যমান হওয়ার মতো যথেষ্ট উজ্জ্বল। তবে ইউরেনাস ও নেপচুন দেখতে হলে বাইনোকুলার বা টেলিস্কোপের প্রয়োজন হয়।
সাধারণত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে রাতের আকাশ পরিষ্কার থাকলে বুধ ছাড়া সব কটি গ্রহই পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান হয়। একে গ্রহের কুচকাওয়াজ বা প্ল্যানেটারি প্যারেড বলেও ডাকা হয়ে থাকে। তবে ২৮ ফেব্রুয়ারি আবহাওয়া পরিস্থিতি ঠিক থাকলে একসঙ্গে সাতটি গ্রহকেই পৃথিবী থেকে দেখা যাবে।
যুক্তরাজ্যে ফিফথ স্টার ল্যাবসের জ্যোতির্বিদ জেনিফার মিলার্ড বলেন, ‘নিজের চোখে গ্রহগুলো দেখার মধ্যে একটা বিশেষত্ব আছে। এই বস্তুগুলোর দিকে তাকানোর মানে হলো আপনি এমন কিছু আলোককণার দিকে তাকাচ্ছেন, যা মহাকাশের মধ্য দিয়ে লাখ লাখ বা কোটি কোটি মাইল পেরিয়ে আপনার চোখের রেটিনার ওপর এসে পড়ছে।’
মন্তব্য করুন