সারাদিন রোজা রাখার পর মুসলমানদের কাছে ইফতার একটা উৎসবের মতো। আর ইফতারের অন্যতম একটি বড় অনুষঙ্গ হলো খেজুর। খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙা রমজানের ঐতিহ্য। নির্দিষ্ট কোনো দেশে নয়, খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙার চল বিশ্বজুড়ে। কখনো ভেবেছেন কেন রমজানের সময় খেজুর এত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। রমজানের ইফতারে খেজুর খাওয়ার তাৎপর্য কি?
মরু অঞ্চলেই খেজুর বেশি উৎপাদিত হয়। সৌদি আরবের প্রতিনিধিত্বকারী ফলই খেজুর। আরবরা প্রধানত খেজুর ও আরবি কফি দিয়ে আপ্যায়ন করেন। খেজুরের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ, আকৃতি ও রং; এর মিষ্টতায়ও রয়েছে বৈচিত্র্য। আর হাদিস মতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও খেজুর দিয়েই ইফতার করতেন।
ফলে রমজান মাসে সুন্নত হিসেবে বিশ্বব্যাপী রোজাদাররা খেজুর খেয়ে ইফতার করেন। খেজুরের ধর্মীয় তাৎপর্য তো আছে অবশ্যই। এ ছাড়া বিশেষ কিছু পুষ্টিগুণ থাকার কারণে রোজা ভাঙার জন্য খেজুর একটি আদর্শ খাবার। খেজুরে বিদ্যমান প্রাকৃতিক মিষ্টিতে প্রধানত গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ আছে, যা দ্রুত রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়। তাই সারা দিন রোজা রাখার পর খেজুর খেলে শরীর দ্রুত সতেজ ও সবল হয়ে ওঠে।
খেজুরে প্রচুর পানি থাকে, যা সারা দিন পানি না খাওয়ার ফলে শরীরে যে ঘাটতি থাকে, তা পূরণ করে। শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে এবং রোজার সময় পানিশূন্যতা রোধ করে। খেজুরে বিদ্যমান চিনি সহজে পরিপাকযোগ্য। সারা দিন রোজা রাখার পর খালি পেটে খেজুর খেলে পরিপাক সহজ হয়। পাকস্থলীতেও কোনো জটিলতা তৈরি হয় না।
এ ছাড়া খেজুরে যে আঁশ থাকে, তা পরিপাক ক্ষমতা বাড়ায়, কোষ্টকাঠিন্য দূর করে। খেজুরে মেলে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট বা জারণরোধী এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বা প্রদাহরোধী উপাদান, যা শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায় এবং প্রদাহ কমায়।
ইফতারের শুরুতে খেজুর খাওয়ার পেছনে ধর্মীয় তাৎপর্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। খেজুর খেয়ে ইফতার করা সুন্নত। আর তাই রমজান মাসে খেজুরের কদর বেড়ে যায়। খেজুর না থাকলে যেন পরিপূর্ণ হয় না। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় থেকেই খেজুর দিয়ে ইফতারের চল। নবী (সা.) নিজে খেজুর ও পানি খেয়ে ইফতার করতেন।
মিষ্টান্ন, ফল, বিশেষত খেজুর খেয়ে ইফতার করা সুন্নত; যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে যে কোনো হালাল খাবার খেয়ে, এমনকি শুধু পানি দিয়েও ইফতার করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দিয়ে; নিশ্চয়ই পানি পবিত্র।
মন্তব্য করুন