দুর্ঘটনাবশত সেতু থেকে নদীতে পড়ে যান এক ব্যক্তি। খরস্রোতা নদীর গ্রাস থেকে ওই ব্যক্তির সাহায্য করতে এগিয়ে আসার মতো আশপাশে কেউ ছিলেন না। বাবার মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত ধরে নিয়েই তীরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকেন অসহায় মেয়ে। এমন সময় ডুবন্ত ব্যক্তিকে উদ্ধারে নদীতে ঝাঁপ দেয় একটি ঘোড়া।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনের বরাতে এনডিটিভি জানায়, ঘটনাটি চীনের। ডুবে যাওয়া থেকে ওই ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য বীরত্বপূর্ণ সম্মান পায় ঘোড়াটি। কিন্তু উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন করার কয়েকদিন পর সাত বছর বয়সী সাদা ঘোড়াটি মারা গেছে।
ঘোড়াটির আদুরে নাম বেইলং। যার অর্থ সাদা ড্রাগন। তার মালিক ইলিবাই জানান, বেইলং আগে কখনও পানিতে পা রাখেনি। তা সত্বেও লোকটিকে উদ্ধার করেছে। কিন্তু এর জন্য তাকে চূড়ান্ত মূল্য দিতে হয়েছে।
ইলিবাই বলেন, ‘বেইলং এবং আমি একসঙ্গে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। দয়া করে আমার সামনে এটি নিয়ে কথা বলবেন না। তার কোনো কিছু স্মরণ করিয়ে আমাকে কাঁদাবেন না।’ পরক্ষণে তিনি কিছুটা স্থির হন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ।
উদ্ধারের ছয় দিন পর বেইলং হঠাৎ করে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। মলত্যাগও করে না। এরপর তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হয় ঘোড়াটি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পশুচিকিৎসকদের ডাকেন। ঘোড়াটিকে সুস্থ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু বেইলং আর সুস্থ হয়নি। আর ঘাস খায়নি। গত মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সেটি মারা যায়।
ইলিবাই বলেন, আমার আদেশ পাওয়ার পর ঘোড়াটি তা বাস্তবায়ন করে। অত্যন্ত সহযোগিতামূলক ছিল সে। উদ্ধার প্রচেষ্টায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল আমার ঘোড়া ।
উদ্ধারের ঘটনাটি ৪ ফেব্রুয়ারির। চীনের হুবেই প্রদেশের জিয়ানতাও শহরে ইলিবাই ও বেইলং দুজনেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় এক ব্যক্তি সেতু থেকে নদীতে পড়ে যান। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মেয়ে যখন নদীর তীরে দাঁড়িয়ে সাহায্যের জন্য ডাকছিলেন তখন আগপিছ না ভেবে বেইলংকে পানিতে নামান ইলিবাই।
বেইলং ৪০ মিটারেরও বেশি সাঁতার কাটে। এ সময় এক হাতে ইলিবাই লাগাম ধরে অন্য হাতে লোকটিকে টেনে নিয়ে তীরে তোলে। ইলিবাই বলেন, যে বেইলং আগে কখনও পানিতে নামেনি তাকেই নদীতে নামাই। তখনই বুঝেছি ঘোড়ার জন্যও ঝুঁকি অপেক্ষা করছে। কিন্তু আমি এটা নিয়ে দুবার ভাবিনি। একটি জীবন বাঁচাতে হলে আমাকে ওই পদক্ষেপ নিতেই হতো।
তিনি বলেন, বেইলং বুদ্ধিমান। আমি যখন তাকে চাবুক মারলাম, তখন সে বুঝে গিয়েছিল কীভাবে নদীতে নামতে হবে। আমি ও আমার ঘোড়া পরিবারের মতো। আমি তাকে বিশ্বাস করতাম এবং সে আমাকে বিশ্বাস করত।
এ ঘটনা নাড়া দিয়েছে জিয়ানতাও স্থানীয় সরকারকেও। তারা বলেছে, ইলিবাই এবং উদ্ধার অভিযানে জড়িত ঘোড়ার সাহসিকতা পুরস্কারের বিবেচনা প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া নদীর কাছে ঘোড়ার একটি মূর্তি স্থানীয় সরকার স্থাপন করবে।
বেইলং এবং ইলিবাই যে ব্যক্তিকে রক্ষা করেছিলেন তিনি বলেন, ঘোড়ার মৃত্যুর জন্য তিনি দোষী বোধ করছেন। তিনি কষ্ট পাচ্ছেন।
মন্তব্য করুন