পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার কন্যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। মা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বেশ প্রতাপের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলে পুতুলের দুর্নীতির তথ্যও সামনে আসে।
জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপব্যবহার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালকের পদ পাওয়ার জন্য অনিয়ম করেছিলেন। এর প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলামের গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার এবং নিয়মবহির্ভূত কার্যকলাপের আশ্রয় নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে দুদক। অনুসন্ধানে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য থেকে জানা গেছে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশের মনোনয়নের ভিত্তিতে পদায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার এবং নিয়মবহির্ভূত কার্যকলাপের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ পান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। দুদক বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পুতুলকে নিয়োগ দেন।
এদিকে পুতুলকে ‘হু’ থেকে অপসারণের পক্ষে একটি পিটিশন ক্যাম্পেইন চালু করা হয়েছে। গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্বের বৃহত্তম পিটিশন প্ল্যাটফর্ম চেঞ্জ ডট ওআরজি-তে পিটিশন ক্যাম্পেইনটি চালু করে মুক্ত, গণতান্ত্রিক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য কাজ করা মানবাধিকার কর্মীদের প্ল্যাটফর্ম ‘অ্যাক্ট নাও বাংলাদেশ’।
পিটিশনের লিংক শেয়ার করে প্ল্যাটফর্মটি ফেসবুকে লিখেছে, দয়া করে স্বাক্ষর করুন এবং শেয়ার করুন! মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত শাসনব্যবস্থার অধীনে নীতিমালা সমর্থন দেওয়ার কারণে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে হু থেকে অপসারণের দাবিতে আমাদের সঙ্গে যোগ দিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য নেতৃত্বে সততা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য আমাদের আবেদনে স্বাক্ষর করুন।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল কি এখনো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হয়ে কাজ করছেন? নাকি মা শেখ হাসিনার মতো আত্মগোপনে চলে গেছেন তিনি?
এমন প্রশ্নের উত্তর মিলল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, পুতুল এখনো স্বপদে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংস্থার প্রতিনিধি হয়েও অংশ নিচ্ছেন।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আজ থাইল্যান্ডের মাহিদোল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরিরাজ হাসপাতালের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। যাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে ট্রমা, আঘাত, পতন প্রতিরোধে এবং এর ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘হু’-এর সহযোগিতা জোরদার করা যায়।
এ অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথির সঙ্গে সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে পুতুলও উপস্থিত ছিলেন। এক ছবিতে সমঝোতা স্মারক হাতে তাকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেছে। অপরদিকে মাহিদোল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরিরাজ হাসপাতালের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক আপিচাত আসাভামংকোলকুল উপস্থিত ছিলেন।
এ স্মারক সই নিয়ে বক্তব্যও দিয়েছেন পুতুল। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী আঘাতের প্রভাব অপরিসীম। এর ফলে সৃষ্ট যন্ত্রণা, অক্ষমতা এবং অকাল মৃত্যু বিশ্বব্যাপী সমাজের ওপর একটি উল্লেখযোগ্য এবং ক্রমবর্ধমান আর্থিক বোঝা চাপিয়ে দেয়। মাহিদোল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরিরাজ হাসপাতালের সঙ্গে এই সহযোগিতা, তাদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সক্ষমতা তৈরি, প্রমাণভিত্তিক অনুশীলনগুলোকে শক্তিশালী করার এবং অঞ্চলজুড়ে গভীর সহযোগিতা গড়ে তোলার একটি অনন্য সুযোগ প্রদান করবে।
মন্তব্য করুন