কারা থাকে দূর আকাশে? কেমন তাদের চলন-বলন? তা নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই মানুষের। ভিনগ্রহের প্রাণীদের নিয়ে রয়েছে কত-শত কল্পকাহিনি।
এসব কাহিনির ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়েছে সিনেমাও। মহাকাশবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ৫০ বছর আগে পাঠানো হয়েছিল ইলেকট্রনিক সিগন্যাল। উদ্দেশ্য ছিল, ফিরতি বার্তা পাওয়ার। কী ছিল সেই বার্তায়? ভিনগ্রহ থেকে কী কোনো জবাব এসেছিল?
১৯৭৪ সালের ১৬ নভেম্বর। পুয়ের্তো রিকোর আরেচিবো অবজারভেটরি থেকে প্রথমবারের মতো অ্যালিয়েনদের কাছে রেডিও বার্তা পাঠানো হয়। ওই সময় এই অবজারভেটরিতেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিঙ্গেল-ডিশ রেডিও টেলিস্কপ ছিল। আমাদের পৃথিবী থেকে ৮ কিলোপারসেক দূরত্বে অবস্থিত হারকিউলিস নক্ষত্রপুঞ্জের গ্রেটার গ্লোবুলার ক্লাস্টার লক্ষ্য করে ওই বার্তা পাঠানো হয়েছিল।
মূলত স্ট্যান্টবাজির অংশ হিসেবে ওই বার্তা পাঠানো হয়েছিল। আরেচিবো টেলিস্কোপের বড় ধরনের আপগ্রেড করা হয়। এরপরই জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আগের চেয়ে উন্নত টেলিস্কোপটির সক্ষমতা যাচাই করে দেখতে চাইছিলেন। আর অ্যালিয়েনদের সঙ্গে যোগাযোগের এই দায়িত্ব দেওয়া হয় রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ড্রেককে। তিনি তখন অবজারভেটরিটির পরিচালক ছিলেন।
মহাকাশবাসীদের লক্ষ্য করে পাঠানো বার্তা ছিল বাইনারি ডিজিট অর্থাৎ শূন্য ও একের সমন্বয়। এর মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল কিছু সংখ্যা। সঙ্গে পাঠানো হয় মানবজাতির বেসিক কিছু তথ্যসংবলিত ছবিও। প্রথমে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত সংখ্যা, তারপর মানুষের ডিএনএর আণবিক সংখ্যা পাঠানো হয়। এরপর ডিএনএর নিউক্লিওটাইডস, হিউম্যান জিনোম এবং ডিএনএ-র ডাবল হেলিক্স স্ট্রাকচারও অ্যালিয়েনদের কাছে পাঠানো হয়।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে একজন মানুষের গড় উচ্চতা কত সেটিও পাঠানো হয়। এ ছাড়া মানব আকৃতির একটি পিক্সেলেটেড ইলাস্ট্রেশন, পৃথিবীর সেই সময়ের জনসংখ্যা কত সেই তথ্যও ভিনগ্রহের প্রাণীদের জানানো হয়। পাশাপাশি সৌরজগতের একটি ডায়াগ্রাম, আরেচিবো রেডিও টেলিস্কোপের একটি ছবি এবং সেখানে থাকা ডিশের ব্যাসার্ধ কত, তা-ও পাঠান জ্যোতির্বিদরা।
পরবর্তীতে ডাবা সোবেলের সঙ্গে মিলে ইজ অ্যানিওয়ান আউট দেওয়ার? নামে একটি বই লিখেন ড্রেক। সেখানে মানবজাতি নিয়ে পাঠানো বার্তার বিস্তারিত বর্ণনা করেন তিনি। ড্রেক জানান, পুরো বার্তাটি ছিল ১ হাজার ৬৭৯ বিটের। আর এটা ২৩ বাই ৭৩ পিক্সেলের একটি গ্রিড হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। যাতে করে ভিনগ্রহের প্রাণীরা এই বার্তা ডিকোড করতে পারে। অবশ্য পৃথিবীবাসী ভিনগ্রহ থেকে ফিরতি কোনো বার্তা পায়নি।
মন্তব্য করুন