বিশ্বের বড় বড় খাদ্য ও পানীয় প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো, যেমন নেসলে, ইউনিলিভার, পেপসিকো, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে উচ্চ আয়ের দেশগুলোর তুলনায় কম স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করছে।
খাদ্যপণ্যের পুষ্টিমান নিয়ে এক গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর এ ব্যবসায়িক কৌশল গরিব দেশগুলোর স্বাস্থ্য পরিস্থিতির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যাক্সেস টু নিউট্রিশন ইনিশিয়েটিভ (এটিএনআই) তাদের প্রতিবেদনটিতে খাদ্যপণ্যের পুষ্টিমান পর্যালোচনা করেছে। তারা দেখিয়েছে, খাদ্যপণ্যের পুষ্টিমান নিয়ে কীভাবে ধনী ও গরিব দেশগুলোর মধ্যে বৈষম্য করা হচ্ছে।
এটিএনআই তাদের গবেষণায় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্যমান রেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছে, যেখানে পণ্যের পুষ্টিমান ৫ তারকা হিসেবে রেটিং দেওয়া হয়। ৩.৫ বা তার বেশি স্কোরে পণ্যকে স্বাস্থ্যকর হিসেবে গণ্য করা হয়।
গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে বিক্রি হওয়া খাবারের গড় পুষ্টি মান ছিল মাত্র ১.৮ তারকা, যা অনেকটাই কম। অপরদিকে, উচ্চ আয়ের দেশগুলোর পণ্যের গড় মান ছিল ২.৩ তারকা। এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে যে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো গরিব দেশগুলোর জন্য কম স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করে। যদিও তাদের পণ্য উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে তুলনামূলকভাবে স্বাস্থ্যকর।
এ ছাড়া গবেষণায় উঠে এসেছে, এটি শুধু কোম্পানির বিপণন কৌশলের বিষয় নয় বরং এটি বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বৈষম্য সৃষ্টি করছে। এটিএনআই-এর গবেষণা পরিচালক মার্ক উইন রয়টার্সকে বলেছেন, ‘এটি একটি খুবই স্পষ্ট ছবি যে, গরিব দেশে কম স্বাস্থ্যকর পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে এবং তা অনেক বেশি প্রচারিত হচ্ছে, যা বিশ্বের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে এবং দরিদ্র দেশগুলোর সরকারের জন্য একটি সতর্কবার্তা।’
এ গবেষণায় প্রথমবারের মতো প্রতিবেদনে ধনী এবং গরিব দেশগুলোর মধ্যে পণ্যের পুষ্টি মান আলাদা করে মূল্যায়ন করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করছে।
উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এক বিলিয়ন মানুষ স্থূলতায় আক্রান্ত। এর মধ্যে ৭০% মানুষ বাস করছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। পুষ্টির মান কম থাকলে দীর্ঘমেয়াদে স্থূলতা, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
খাদ্যপণ্যের পুষ্টি মান নিয়ে নেসলের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা পুষ্টিকর খাবারের বিক্রি বাড়াতে এবং জনগণকে ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ তবে পেপসিকো এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
খাদ্যপণ্যের পুষ্টি মান নিয়ে ধনী-গরিবের বৈষম্য গবেষণাটি বিশ্বব্যাপী খাদ্য পণ্যের বাজারে বৈষম্য এবং তার দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য প্রভাবের বিষয়টি উন্মোচন করছে, যা গরিব দেশগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মন্তব্য করুন