প্রায় দুই দশক আগে মার্কিন মেরিন সেনাদের হাতে ঘটা ‘হাদিছা গণহত্যার’ ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। বিশ্বের নজর আড়াল করতে এতদিন এ গণহত্যার ছবি গোপন করে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
অবশেষে সাংবাদিকদের দীর্ঘ চেষ্টার পর ছবিগুলো প্রকাশ পেয়েছে। এগুলো দেখে আঁতকে উঠছেন যুদ্ধ-সাংবাদিকরাও। কারণ, সেদিন ইউএস মেরিনরা কাউকে রেহাই দেয়নি। এমনকি ৩ বছর বয়সী এক মেয়ে শিশুকেও নিজ ঘরে হত্যা করে। এরপর লাল মার্কার দিয়ে নম্বর এঁকে তার মুখ চিহ্নিত করেছিল সেনারা।
ঘটনাটি ঘটে ২০০৫ সালের নভেম্বরে ইরাকের হাদিছা শহরে। সেখানে ২৪ জনকে হত্যার পর সেসব রেকর্ড করেছিল সেনারা। কিন্তু সামরিক বাহিনী ছবিগুলো জনসাধারণের কাছ থেকে আড়াল করে রাখে।
মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, তারা নিহতদের পরিবারের সম্মানের জন্য ছবিগুলো এতদিন আটকে রেখেছিলেন। কিন্তু সেই হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া খালিদ সালমান রাসিফ এবং খালিদ জামাল সেসব ছবি প্রকাশের আবেদন করেন। তারা মার্কিনি যুক্তি খণ্ডাতে নিহতদের ১৭ স্বজনের সমর্থন সংগ্রহ করেন। এরপর দ্য নিউ ইয়র্কারের সাংবাদিকরা দীর্ঘদিন চেষ্টা করে ছবিগুলো উদ্ধার করেছে৷
ছবিগুলো উদ্ধারের পর দ্য নিউ ইয়র্কার বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে হাদিছায় সে দিন ঘটা ভয়াবহ নির্মমতার বর্ণনা উঠে এসেছে।
মঙ্গলবারের (২৭ আগস্ট) ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৫ সালের ১৯ নভেম্বরের সকালে মেরিনদের একটি দল ইরাকের হাদিছা শহরের একটি রাস্তায় চারটি সামরিক যানে টহল দিচ্ছিলেন। সেখানে আগে থেকে পুঁতে রাখা একটি আইইডি বিস্ফোরণে তাদের কনভয় মারাত্মকভাবে বিধ্বস্ত হয়। বিস্ফোরণে একজন মেরিন সেনা ল্যান্স কর্পোরাল মিগুয়েল টেরাজাস নিহত এবং অন্য দুজন আহত হন। এর পরে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ-অপরাধ করে মার্কিন সেনারা।
পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মেরিনরা ২৪ ইরাকি পুরুষ, নারী ও শিশুকে হত্যা করে। বিস্ফোরণের স্থানের কাছে তারা গাড়ি থামিয়ে স্কুলগামী পাঁচজনকে গুলি করে। তারা আশপাশের তিনটি বাড়িতে ঢুকে ভেতরে থাকা প্রায় সবাইকে হত্যা করে। নির্মমতার শিকার সবচেয়ে ছোট শিশুটির বয়স ছিল তিন বছর। সবচেয়ে বয়স্ক ছিলেন ৭৬ বছরের বৃদ্ধ। মেরিনরা পরে দাবি করে, তারা সেদিন বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধ করছিল। কিন্তু নিহতরা সবাই বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
হত্যাকাণ্ড শেষ হওয়ার পর অন্য দুই মেরিন পরবর্তী ঘটনা নথিভুক্ত করতে সেখানে যান। তাদের মধ্যে ল্যান্স করপোরাল রায়ান ব্রায়োনেস তার অলিম্পাস ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে এসেছিলেন। ল্যান্স করপোরাল অ্যান্ড্রু রাইটের হাতে ছিল লাল শার্পি মার্কার।
ব্রায়োনেস ও রাইট একে একে ঘটনাস্থলগুলোতে যান। তারা মৃতদেহগুলো সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করেন এবং তারপর তাদের ছবি তোলেন। গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করা একজনসহ অন্য মেরিনরাও ছবি তোলেন। তারা ফটোগ্রাফের একটি সংগ্রহ তৈরি করেছিলেন। এসবই তাদের সহযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা প্রমাণে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ।
ছবিগুলোর বিভৎসতা বিবেচনায় সাধারণ পাঠকদের আতঙ্ক এড়াতে তা সরাসরি প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকছে কালবেলা। তবে এ লিংকে ক্লিক করে ছবিগুলো দেখা যাবে।
মন্তব্য করুন