টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুব দেওয়া পর্যটকবাহী সাবমেরিন টাইটান কীভাবে ভেঙে পাঁচ টুকরা হয়ে গেল, সেটা নিয়েই এখন কাটাছেঁড়া চলছে; সঙ্গে বাড়ছে রহস্যও। টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাঁচ আরোহী নিয়ে ডুবোযান টাইটান ‘ভয়ংকর অন্তর্মুখী বিস্ফোরণে’ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড। এরপরই প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে ভাঙল সাবমেরিনটি?
টাইটানের শেষ পরিণতি নিয়ে নানা জল্পনার মধ্যে শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মার্কিন কোস্টগার্ড। তারা জানান, টাইটানের ধ্বংসাবশেষ দেখে মনে হয়েছে সাগরের তলদেশে যাত্রা শুরুর পর কোনো একসময় সাবমেরিনটিতে ছিদ্র বা ফাটল দেখা দিয়েছিল। সাবমেরিনটি তখন পানির এতটাই গভীরে ছিল যে, এর ওপরের পানির ওজন ছিল কয়েক হাজার টন। বলা যায়, পুরো আইফেল টাওয়ারের ওজনের সমান। তখনও টাইটানের ভেতরে সুরক্ষিত ছিলেন যাত্রীরা।
সিডনি ইউনিভার্সিটির মেরিন রোবটিকস বিভাগের অধ্যাপক গবেষক স্টিফেন উইলিয়ামসের মতে, তিনটি কারণে সাবমেরিন টাইটান ভেঙে যেতে পারে। একটি কারণ হতে পারে সাবমার্সিবল টাইটানের ইলেকট্রিকাল সিস্টেমে গন্ডগোল; ফলে পানিতে ডুব কিছু সময় পরই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আরেকটি কারণ হতে পারে, সমুদ্রের গভীরে জলরাশির বিপুল চাপে ১৩ হাজার ফুটের নিচে নেমে গিয়েছিল টাইটান। সেখানে ডুবোযানটি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষে ফেঁসে যেতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, বের হতে না পেরে সেটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এ ছাড়া টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষে ধাক্কা লেগে ভেঙে ৫ টুকরো হতে পারে ডুবোজাহাজটি।
তবে এই সাবমেরিন বিস্ফোরণের আসল কারণ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের নৌবাহিনীর সাবেক সাবমেরিন চালক রেয়ান রামসে। টাইটান বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ জানতে সাবমেরিনটির ধ্বংসাবশেষগুলো একসঙ্গে করবেন তদন্তকারীরা। উড়োজাহাজের মতো সাবমেরিনটিতে কোনো ব্ল্যাক বক্স ছিল না। তাই শেষ মুহূর্তে সেটিতে কী হয়েছিল, তা জানা যাবে না।
এ ছাড়া তদন্তের অন্য প্রক্রিয়াগুলো একটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার তদন্তের চেয়ে আলাদা হবে না বলে জানান তিনি।
টাইটান আরোহীদের মরদেহ উদ্ধার করা যাবে কিনা নিশ্চিত হতে পারেননি উদ্ধারকারীরা। এক বিবৃতিতে টাইটান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ওশানগেট জানায়, সাবমেরিনে থাকা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টকশন রাশ, হ্যামিশ হার্ডিং, পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ এবং পল-হেনরি নারজিওলেট দুঃখজনকভাবে হারিয়ে গেছেন।
১০০ বছরের বেশি সময় আগে ১৯১২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায় সেই সময়ের সর্ববৃহৎ জাহাজ টাইটানিক। জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে গত রোববার পর্যটক নিয়ে ডুব দিয়েছিল ডুবোযান টাইটান।
আটলান্টিকের গভীরে ডুব দেওয়ার পৌনে দুই ঘণ্টার মাথায় টাইটানের সঙ্গে পানির ওপরে থাকা নিয়ন্ত্রক জাহাজ ‘পোলার প্রিন্সের’ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। টানা চার দিন উদ্ধার অভিযান চালানোর পর ধ্বংসাবশেষ মেলে পর্যটকবাহী সাবমেরিন টাইটানের।
মন্তব্য করুন