টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে ধ্বংস হওয়া সাবমেরিন টাইটান নিয়ে আগেই উদ্বেগ ছিল বিশেষজ্ঞদের। এজন্য মালিক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ওশানগেটকে কয়েক দফায় চিঠিও দিয়েছিলেন তারা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে বিবিসিকে মার্কিন বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম কোহনেন জানান, টাইটানে নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল। তার মতে, সাবমেরিনটি যে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে, তা এড়ানোর সুযোগ ছিল।
কোহনেন লস অ্যাঞ্জেলেসের ‘ম্যানড আন্ডার ওয়াটার ভেহিক্যাল কমিটির’ প্রধান। ২০১৮ সালে টাইটানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ওশানগেটকে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি।
উইলিয়াম কোহনেন বিবিসিকে জানান, ষাটের দশক থেকে এ ধরনের সাবমেরিনগুলোকে কোনো দুর্ঘটনার মুখে পড়তে দেখেননি। তবে এভাবে সাবমেরিন পরিচালনার পক্ষে নন তিনি।
কোহনেন বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার জলসীমায় পর্যটক নিয়ে এসব সাবমেরিন চলাচলের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।
টাইটান প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের ইউনির্ভাসিটি অব সাউদাম্পটনের সমুদ্রবিজ্ঞানবিষয়ক জ্যেষ্ঠ প্রভাষক সিমন বক্সাল বলেন, সাগরে চলাচলকারী অন্য যানগুলোর মতো টাইটানকে হয়তো একই ধরনের পরীক্ষা–নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সেটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় পরিচালনা করা হতো। আর গভীর সাগরে অনুসন্ধানের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই।
যুক্তরাজ্যের যে কোনো জলযান পানিতে নামানোর আগে নিরাপত্তাসংক্রান্ত কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয় জানিয়ে সিমন বক্সাল বলেন, এই বিশেষ সাবমেরিনটি কোনো কর্তৃপক্ষের নজরদারির আওতায় ছিল না।
বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘টাইটানিক’-এর পরিচালক জেমস ক্যামেরন জানান, টাইটানের নিরাপত্তা নিয়ে ওশানগেটকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, চিঠিতে লেখা হয়েছিল, ‘তোমরা (ওশানগেট) বিপর্যয়ের পথে এগিয়ে চলেছ।’
ওশানগেট কোম্পানি আটলান্টিক মহাসাগরের সাড়ে ১২ হাজার ফুট নিচে পড়ে থাকা বিখ্যাত টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে পর্যটকদের নিয়ে যায়। এ জন্য জনপ্রতি তাদের গুনতে হয় বাংলাদেশি মুদ্রায় আড়াই কোটি টাকা।
১০০ বছরের বেশি সময় আগে ১৯১২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায় সেই সময়ের সর্ববৃহৎ জাহাজ টাইটানিক। জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে গত রোববার পর্যটকদের নিয়ে ডুব দিয়েছিল ডুবোযান টাইটান।
আটলান্টিকের গভীরে ডুব দেওয়ার পৌনে দুই ঘণ্টার মাথায় টাইটানের সঙ্গে পানির ওপরে থাকা নিয়ন্ত্রক জাহাজ ‘পোলার প্রিন্সের’ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর পর থেকে চলছিল টাইটানের উদ্ধার অভিযান।
চার দিনের শ্বাসরুদ্ধকর তল্লাশি শেষে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড জানায়, ভয়ংকর বিস্ফোরণে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে টাইটান। আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষের পাশেই পাওয়া গেছে টাইটানের ধ্বংসস্তূপ। তবে এর ভেতরের পাঁচ আরোহীর মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কিন কোস্টগার্ড।
মন্তব্য করুন