ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিখ নেতা হারদ্বীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভারত-কানাডার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খাদের কিনারায় ঠেকেছে। ওই হত্যাকাণ্ডে ঘটনায় ভারতীয় এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে কানাডা। জবাবে ভারতও কানাডার এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে।
শিখ নেতা নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ভারত ও কানাডার সম্পর্ক কেন অবনতি হলো? কেন নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে কানাডা? এর পেছনে নাকি রয়েছেন আরও এক শিখ নেতা। তার নাম জগমিত সিং। তিনি কানাডার নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) নেতা। আড়ালে বসে তিনিই নাকি ট্রুডোকে প্রভাবিত করছেন। কানাডার রাজনীতিতে এই জগমিতের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কানাডায় শিখ সংসদ সদস্য রয়েছেন মোট ১৮ জন। তাদের মধ্যে ১৭ জনের শিকড় ভারতের পাঞ্জাবে। এই ১৭ সংসদ সদস্যের মধ্যে অন্যতম জগমিত। তিনি কানাডার শিখ নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী। ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর কানাডায় ভোট হয়। ৪৪তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের সেই ভোটে ট্রুডোর দল দ্য লিবারেল পার্টি ১৫৭টি আসন পেয়েছিল। কিন্তু তা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের জন্য যথেষ্ট ছিল না। কানাডার প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে ট্রুডোকে মোট ১৭০টি আসনে জিততে হতো। তিনি ১৩ আসন কম পেয়েছিলেন। এখানেই ময়দানে নামেন জগমিত এবং তার দলের সদস্যরা। ক্ষমতায় বসতে এনডিপির সঙ্গে সমঝোতা করতে হয়েছিল ট্রুডোকে। জগমিতের হাতে ছিল ২৫টি আসন। তার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এনডিপির সমর্থন লাভ করেন ট্রুডো। তার পরেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেন।
অনেকের ধারণা, ট্রুডোর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নেপথ্যে জগমিতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জগমিত না চাইলে ট্রুডো ক্ষমতায় আসতেই পারতেন না। তারপর থেকে এনডিপিকে সমীহ করে চলে কানাডার শাসকদল।
সম্প্রতি কানাডার সংসদে ভাষণ দেন ট্রুডো। সেখানে তিনি বলেন, ‘নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারতের যোগসূত্র রয়েছে।’ এরপর জগমিত সিং বলেন, ‘কানাডার মাটিতে কানাডার নাগরিককে কোনো বিদেশি সরকার খুন করেছে, এ কথা আমি ভাবতেও পারছি না।’
প্রসঙ্গত, অনেক আগে থেকেই ভারতের শিখ ধর্মাবলম্বীরা আলাদা একটি দেশ গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে। ১৯৮৪ সালে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যায় এই খালিস্তানি আন্দোলনের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ওই ঘটনার পরেই ভারতে খালিস্তানি আন্দোলনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন ভারত ছেড়ে কানাডায় আশ্রয় নেন খলিস্তানপন্থি শিখরা। কানাডায় ৭ লক্ষ ৭০ হাজার শিখ বসবাস করছেন, যা কানাডার মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ। তথ্যসূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
মন্তব্য করুন