টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে কানাডা-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক। দেশটিতে জি-২০ সম্মেলনে এসে দীর্ঘ সময় আটকা পড়েছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তার দপ্তরের অভিযোগ, এ সময়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া সম্মেলনে তার সঙ্গে কাঠামোগত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সম্মত হননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর ভারত থেকে দেশে ফিরে কঠোর পদক্ষেপ নেয় কানাডা। তার জবাবে পাল্টা পদক্ষেপে নিয়েছে ভারতও।
আলজাজিরা জানিয়েছে, সবশেষ কানাডার শীর্ষ কূটনীতিককে আগামী পাঁচ দিনে মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরুতে কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীকে হত্যার ঘটনায় ক্রমবর্ধমান বিবাদে অটোয়া ভারতীয় এক কূটনীতিককে বহিষ্কারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সময় তাকে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কানাডার কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ ও ভারতবিরোধী কার্যকলাপে সম্পৃক্ততায় নয়াদিল্লির উদ্বেগ বাড়ছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এর আগে সোমবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানান, দেশটিতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিখ নেতা হারদ্বীপ সিং নিজ্জারকে হত্যার ঘটনায় ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার প্রমাণ মিলেছে। ট্রুডোর এমন অভিযোগের পরপরই দেশটি থেকে ভারতের এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যালানি জোলি জানান, বহিষ্কৃত ওই কূটনীতিক কানাডায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) প্রধান ছিলেন।
ভারতে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া জি-২০ সম্মেলনের পর দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা ক্রমেই সামনে আসছে। শনিবার সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানায়, আগামী অক্টোবর থেকে ভারতে সকল বাণিজ্যিক মিশন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের উত্তেজনার মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে শুক্রবার কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী ম্যারি নংয়ের এক মুখপাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে তিনি এমন পদক্ষেপের কোনো কারণ বলেননি। তিনি বলেন, আপাতত আমরা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক মিশন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এরও আগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাতে আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কানাডার রাজনৈতিক কারণে দেশটির সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দরকষাকষি স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদিকে চলতি বছরের মে মাসে কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী ম্যারি এবং ভারতীয় নেতা পীযূষ গোয়াল বছরের শেষ নাগাদ দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারে আশা প্রকাশ করে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিলেন।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, জি-২০ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠক করতে অসম্মতি জানানোয় ক্ষুব্ধ কানাডা। অন্যদিকে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডে কানাডার ওন্টারিওতে উল্লাস করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এ উপলক্ষে দেশটিতে পদযাত্রাও হয়েছে। এতে ভারতও ক্ষুব্ধ। বিষয়টিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সহিংসতার উদযাপন হিসেবে উল্লেখ করেছে দেশটি।
মন্তব্য করুন