যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি কানাডাকে ৫১তম রাজ্য করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এই বিতর্কিত মন্তব্যের পর কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
ট্রাম্প ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তিনি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করতে অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করবেন। তিনি বলেন, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৃত্রিমভাবে আঁকা রেখা থেকে মুক্তি পেলে, এটি জাতীয় সুরক্ষার জন্যও ভালো হবে। ভুলে যাবেন না, আমরা মূলত কানাডাকে রক্ষা করি।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। তিনি এক্সের পোস্টে লিখেছেন, কানাডা কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হবে না। আমারা দুই দেশই ব্যবসা ও নিরাপত্তার দিক থেকে পরস্পরের সবচেয়ে বড় অংশীদার এবং উভয়েই উপকৃত হই।
ট্রুডোর পদত্যাগের পর ট্রাম্প আবারো কানাডাকে একীভূত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ট্রাম্প জানান, তিনি কানাডার জনগণকে ভালোবাসেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডাকে অর্থনৈতিকভাবে সমর্থন করতে পারবে না। তিনি বলেন, কানাডার জন্য আমরা প্রতি বছর শত শত বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছি। কানাডার গাড়ি, কাঠ, ও দুগ্ধজাত পণ্য আমদানির প্রয়োজন নেই। আমাদের নিজেদের কাছে এসব বেশি আছে। ট্রাম্প আরও বলেন, কানাডার শুল্কের বোঝা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কানাডার অনেক মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত হতে চায়। কানাডা থেকে অনেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে।
ট্রাম্প বলেন, জাস্টিন ট্রুডো এসব জানতেন বলেই পদত্যাগ করেছেন। কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত হলে, সেখানে কোনো শুল্ক ও ট্যাক্স থাকবে না। একইসঙ্গে তারা রাশিয়া ও চীনের হুমকি থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
কানাডার বিরোধী দলীয় নেতা পিয়েরে পোলভি ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, কানাডা কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হবে না। তিনি ট্রাম্পকে সাফ জানিয়ে দেন, এই ধারণা একেবারে অমূলক।
কানাডার পক্ষ থেকে একাধিক বার ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হলেও, ট্রাম্প তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহারের কথা বলেছেন। ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে কানাডার সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। বাণিজ্য ও অভিবাসন নীতির কারণে তিনি ট্রুডোর প্রশাসনকে অনেকবার সমালোচনা করেছেন।
৯ বছর কানাডার নেতৃত্ব দেওয়ার পর, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিজের দল লিবারেল পার্টির প্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, লিবারেল পার্টি নতুন নেতা নির্বাচন না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন। নতুন নেতা নির্বাচনের তারিখ দলীয়ভাবে নির্ধারিত হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রুডোর জনপ্রিয়তার পতন এবং পদত্যাগের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাব রয়েছে। আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন।
সূত্র: গার্ডিয়ান, এনটিভি
মন্তব্য করুন