একটি হিমবাহ গলা শুরুর পর বড় ভূমিধসের ফলে ৬৫০ ফুট উচ্চতার মেগা সুনামি সংঘটিত হয়। গেল বছরের সেপ্টেম্বরে গ্রিনল্যান্ডে এ ঘটনা। ওই ঘটনার পর রহস্যময় এক কম্পনে পুরো পৃথিবী ৯ দিন ধরে কেঁপেছে। তখন ঠিক কী ঘটেছিল, জানতে এক বছর দিন-রাত এক করে ফেলেছেন বিশ্বের বিজ্ঞানীরা। এখন বিজ্ঞানীদের দাবি, রহস্যের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন তারা।
বিশ্বের ১৫টি দেশের ৬৮ বিজ্ঞানী ওই রহস্যভেদে কাজ করেছেন। গবেষকরা বলছেন, গেল বছরের সেপ্টেম্বরে গ্রিনল্যান্ডে ১ দশমিক ২ কিলোমিটার উঁচু হিমবাহের এক পর্বতচূড়া ধসে পড়ে। এতে সেখানকার খাঁড়িতে সামুদ্রিক ঢেউ ওঠানামা করে। আর এ ঘটনায় গোটা পৃথিবীর ভূত্বকে সৃষ্টি হয় কম্পন। যে কারণে ২০০ মিটার বা ৬৫০ ফুটের মেগা সুনামি সৃষ্টি হয়েছিল।
সিসমোলজিস্টরা কম্পনের সংকেত পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিনল্যান্ডে শনাক্ত করেন। তবে ঠিক কোন স্থানে এই কম্পন সৃষ্টি হয়, তা সুনির্দিষ্টভাবে বের করতে পারছিলেন না তারা। তখন ডেনমার্কের সিসমোলজিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা ওই অঞ্চলের প্রত্যন্ত ডিকসন জোর্ড অঞ্চলে ভূমিধসের ঘটনায় সুনামির খবর জানতে পেরেছিলেন। এরপর সিসমিক, স্যাটেলাইট, গ্রাউন্ড ডাটা এবং সুনামি ঢেউয়ের সিমুলেশনের মাধ্যমে গোলক ধাঁধার সমাধান করেন।
গবেষকরা জানান, পর্বতের পাদদেশে হিমবাহ পাতলা হয়ে ওই ভূমিধসের সৃষ্টি হয়। এর জন্য দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন। অভাবনীয় এমন ঘটনার গবেষণায় যুক্ত ছিলেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা। গবেষণা প্রতিবেদনটি সহরচনা করেছেন স্টিফেন হিকস। তিনি বলেন, পূর্ব গ্রিনল্যান্ডের ডিকসন নামের খাঁড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে, যা একেবারে হতবাক করেছে বিজ্ঞানীদের।
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থানেও বড় ভূমিধসের আশঙ্কা থাকার বিষয়টি ফুটে উঠেছে এ ঘটনায়। তবে ৯ দিন ধরে পানির ওই বয়ে চলা কীভাবে অব্যাহত ছিল, একটি গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে তা পুনরায় করে দেখিয়েছেন গবেষকরা। পুরো ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সায়েন্সে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, ওই ঘটনায় প্রতি ৯০ সেকেন্ডে পানি সামনে-পেছনে আছড়ে পড়ে। এটি পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্য দিয়ে কম্পন ছড়িয়ে দেয়। এতেই সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সুনামিগুলোর একটি তৈরি হয়। গবেষকরা বলছেন, ভূমিধসের কারণে এত পরিমাণ পাথর ও ধ্বংসাবশেষ পানিতে আছড়ে পড়ে, যা দিয়ে অলিম্পিক সাইজের ১০ হাজার সুইমিংপুল ভরে ফেলা সম্ভব।
মন্তব্য করুন