পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে ইরানে? ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর দেশটিতে নির্বাচনে এগিয়ে রয়েছেন সংস্কারবাদী নেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান। পেশায় হার্ট সার্জন ছিলেন। কিন্তু নাম লিখিয়েছেন রাজনীতিতে। সামলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং ডেপুটি স্পিকারের মতো পদও। এরইমধ্যে দেশটিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন তিনি। তবে নিয়মানুযায়ী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় গড়িয়েছে এ নির্বাচন।
ইরানে প্রথাগতভাবে ক্ষমতা দখল করে আসছে কট্টরপন্থিরা। তবে এবারের নির্বাচনে মাসুদ পেকেশকিয়ানের জনপ্রিয়তা আশা দেখাচ্ছে সংস্কারবাদীদের। নির্বাচন পূর্ব জরিপেও উঠে এসেছে যে পেজেশকিয়ানই জয়ী হচ্ছেনে।
গেল কয়েক দশকে ইরানে যিনিই ক্ষমতায় এসেছেন, তিনিই তীব্র যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব পোষণ করেছেন। তবে এবার সেই ছন্দে পতন ঘটতে পারে। পেজেশকিয়ান নির্বাচনে জয়ী হলে বদলে যেতে পারে ইরানের পররাষ্ট্রনীতি। কয়েকদিন আগেই তিনি জানিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করবেন তিনি। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, ইসরায়েল ছাড়া বাকি সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে চান পেজেশকিয়ান।
শুক্রবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কট্টরপন্থি সাইদ জলিলির সঙ্গে পেজেশকিয়ানের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। তবে এগিয়ে রয়েছেন মাসুদ পেজেশকিয়ান। পেয়েছেন ৪২ শতাংশের বেশি ভোট।
নির্বাচনপূর্ব এক জরিপে দেখা গেছে, শুক্রবারের ভোটাভুটিতে স্পষ্ট বিজয়ী হচ্ছেন পেজেশকিয়ান। ইরানের রিপাবলিকান গার্ডের জরিপ বলছে, নির্বাচনে কমপক্ষে ৩৭ শতাংশ ভোট পাবেন সংস্কারবাদী পেজেশকিয়ান।
মাশহাদের ফেরদৌসি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত আরেকটি জরিপেও এগিয়ে রয়েছেন তিনি। ওই জরিপ বলছে, নির্বাচনে ৪২.৩ শতাংশ ভোট পাবেন পেজেশকিয়ান। তবে নির্বাচনে কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় দ্বিতীয় দফার নির্বাচন হবে ৫ জুলাই।
আজারবাইজানের বংশোদ্ভূত পেজেশকিয়ানের জীবন সংগ্রামে ভরা। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সন্তানদের একাই মানুষ করেছেন। কিন্তু এজন্য কখনো কারও সহমর্মিতা আদায়ের চেষ্টা করেননি তিনি। সাবেক সংস্কারবাদী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির প্রশাসনে উপস্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদে আসীন হওয়ার মাধ্যমে পেজেশকিয়ানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু। পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ পর্যন্ত ৫ বার পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন পেজেশকিয়ান।
হাসান রুহানির শাসনামলে করা পরমাণু চুক্তির একজন কট্টর সমর্থক ছিলেন পেজেশকিয়ান। প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য বা দুর্নীতি না করেই ইরানের রাজনীতিতে নিজের জায়গা শক্ত করেছেন তিনি। দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অবস্থানের কারণে নির্বাচনে তিনি জনপ্রিয় নেতা মাহমুদ আহমাদিনেজাদের সমর্থক ভোট পাবেন বলেও মনে করা হচ্ছে। তবে বিদেশ নীতি নিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সঙ্গে তার স্পষ্ট বিভেদ, পেজেশকিয়ানের পথ কঠিন করে দিতে পারে।
মন্তব্য করুন