মোড় ঘুরে যাচ্ছে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের। আট মাসেও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা যোদ্ধাদের নির্মূল করতে পারেনি ইসরায়েল। যুদ্ধ জয় এখনো মরীচিকাই হয়ে রয়েছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য। ক্রমাগত সমালোচনার জেরে ভেঙে দিতে হয়েছে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভাও।
এবার ইসরায়েলের শীর্ষ একজন সামরিক কর্মকর্তার মন্তব্যে দেশটিতে হইচই পড়ে গেছে। পরে তড়িঘড়ি করে ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যাও দিয়েছে ইসরায়েল সরকার।
গাজার পর ইসরায়েলের নজর এবার লেবাননে। কিন্তু গাজায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গেই পারছে না ইসরায়েল। এরই মধ্যে ইসরায়েলের শীর্ষ একজন সামরিক কর্মকর্তা ‘সরল’ স্বীকারোক্তি দিয়ে বসেছেন।
বুধবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা যোদ্ধাদের নির্মূল করা যাবে না।’ তিনি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি। গাজা যুদ্ধে যার ভূমিকা বেশি।
এতেই ইসরায়েলি সরকারের হাঁটুতে জোর কমে যায়। পরে তড়িঘড়ি ব্যাখ্যায় জানায়, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের পুরোপুরি নির্মূলে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আট মাস ধরে চলা ‘অনেকটা’ একপেশে হামলায় গাজাকে প্রায় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। মৌলিক চাহিদা মেটানোর অনেক কিছুই এখন গাজায় মিলছে না। এত কিছুর পরও গাজায় জয়ী হওয়া তো দূরের কথা, এখন যুদ্ধ সমাপ্তির পথ খুঁজছে ইসরায়েল।
এত দিন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা সেই কথাই আকারে-ইঙ্গিতে বলেছেন। তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বললেন স্পষ্ট কথা।
দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি একটি সম্প্রচারমাধ্যমকে হাগারি বলেন, ‘আমরা যদি বলি হামাসকে নির্মূল করে দিতে পারব, তাহলে তা মানুষের চোখে ধুলা দেওয়ার মতো হবে। যদি আমরা ভিন্ন কোনো পথ খুঁজে বের না করি, শেষ পর্যন্ত আমাদের সামনে হামাস ছাড়া আর কেউ থাকবে না।’
ইসরায়েলের শীর্ষ এই সামরিক কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘হামাস একটি মতাদর্শ, আমরা এই মতাদর্শকে নির্মূল করতে পারব না।’
পরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অফিস থেকে জানানো হয়, হামাসকে পরাজিত না করা পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে না। আর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও অবশ্যই এমনটা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আছে।
এর আগে নেতানিয়াহু ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যরাও একই ধরনের কথা জোর গলায় বলেছেন। হাগারির ওই মন্তব্য দিয়ে বিবৃতি দিতে হয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকেও। এই সেনা কর্মকর্তার বক্তব্য স্পষ্ট ছিল, এটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে তারা।
গেল বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতর ঢুকে হামলা চালায় ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা যোদ্ধারা। এতে এ পর্যন্ত প্রায় ১২শ’ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। পাল্টা হামলা চালিয়েছে ৩৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। কিন্তু এই যুদ্ধে স্পষ্ট জয় বা পরাজয় নির্ধারণ হয়নি। ইসরায়েল গাজায় ঢুকে হামলা অব্যাহত রাখলেও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা যোদ্ধাদের পরাজিত করতে পারছে না। এ কারণে ইসরায়েলের ভেতরেই চাপে পড়েছে নেতানিয়াহু সরকার।
মন্তব্য করুন