ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসকে (আইআরজিসি) ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে কানাডা। কানাডা সরকার বুধবার এক বিবৃতির মাধ্যমে বিষয়টি জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, হামাস ও হিজবুল্লাহর সঙ্গে আইআরজিসির সম্পর্ক রয়েছে। গোষ্ঠীটি ইরানেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত। এ পদক্ষেপ সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিহত করতে সহায়তা করবে।
আরও বলা হয়, কানাডা সন্ত্রাসবাদে একটুও প্রশয় দেয় না। এ তালিকাভুক্তির মাধ্যমে বার্তাটি সারা বিশ্বে জোরালোভাবে দেওয়া হলো। এ ছাড়া কানাডা ইরানে অবস্থানরত তাদের নাগরিকদের সরে যেতে বলেছে। অতি প্রয়োজনে কেউ অবস্থান করলেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে কানাডার জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ডমিনিক লেব্লাঙ্ক বলেন, এ পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাতিয়ারের কাজ করবে। ইরানের শাসক ক্রমাগতভাবে দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে মানবাধিকারের প্রতি সম্পূর্ণ অবহেলা প্রদর্শন করছে। সেই সাথে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির আদেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। আইআরজিসি-কে তালিকাভুক্ত করা কানাডা সরকারের বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ। যাতে ইরানের বেআইনি কর্মকাণ্ড ও সন্ত্রাসবাদের সমর্থনের জন্য কোনো দায়মুক্তি না থাকে।
কয়েক বছর ধরে কানাডার বিরোধী আইনপ্রণেতারা ও ইরানপ্রবাসী একপি পক্ষ এ দাবি করে আসছিল। তবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এ পদক্ষেপ নিতে রাজি ছিলেন না। তখন তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অজুহাত দেন। কিন্তু হঠাৎ ট্রুডো মত পরিবর্তন করেন এবং তার সরকার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়।
কানাডার আগে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র আইআরজিসিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। যুক্তরাজ্যও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আভাস রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আইআরজিসিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় ইরান সরকারের হাজারো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কানাডায় প্রবেশ করতে পারবেন না। তাদের ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়ে গেল।
এ ছাড়া কানাডায় থাকা আইআরজিসির সম্পদ স্থগিত করা হবে। কানাডার কোনো নাগরিক বা কোম্পানি সংগঠনটির সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারবে না।
ইরানে আইআরজিসিকে একটি অভিজাত বাহিনী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় এ বাহিনী কাজ করে। সম্প্রতি হিজাববিরোধী আন্দোলন দমনে বাহিনীটির বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর আচরণের অভিযোগ উঠে।
তবে ইরানে বাহিনীটির সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষী প্রচুর। দেশটির সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই বাহিনীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ইরানে ইসলামি বিপ্লবের রক্ষাকারী হিসেবে বাহিনীটি সমাদৃত।
আইআরজিসির প্রায় দুই লাখ সক্রিয় সদস্য রয়েছেন। আইআরজিসির নিজস্ব স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী রয়েছে। তারা ইরানের কৌশলগত অস্ত্রের তদারক করে। তারা হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো সংগঠনকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধেও আইআরজিসির প্রভাব স্পষ্ট।
মন্তব্য করুন