কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৪, ১০:২১ এএম
অনলাইন সংস্করণ

এবার সাইপ্রাসে হামলার হুমকি

হিজবুল্লাহর রকেট হামলায় লেবানন সীমান্তঘেঁষা ইসরায়েল ভূখণ্ডে আগুন জ্বলছে। গত সপ্তাহের তোলা ছবি : রয়টার্স
হিজবুল্লাহর রকেট হামলায় লেবানন সীমান্তঘেঁষা ইসরায়েল ভূখণ্ডে আগুন জ্বলছে। গত সপ্তাহের তোলা ছবি : রয়টার্স

লেবাননে সর্বাত্মক হামলার জন্য ইসরায়েলের প্রস্তুতির মধ্যে নতুন করে হিজবুল্লাহর কাছ থেকে হুমকি এলো। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি এবার ইসরায়েলকে তছনছ করা ছাড়াও সাইপ্রাস আক্রমণ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

বুধবার (১৯ জুন) টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে হিজবুল্লাহ সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহ দৃঢ়চিত্তে এ ধরনের কথা বলেন। ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেসের নর্দার্ন কমান্ড মেজর জেনারেল ওরি গরদিন ও হেড অব দ্য অপারেশন্স ডিরেক্টরেটের মেজর জেনারেল ওদেদ বাসিউক মঙ্গলবার লেবাননে যুদ্ধ পরিকল্পনা অনুমোদন করার একদিন পর এ ধরনের ঘোষণা এলো।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে লেবানন থেকে প্রায়ই ইসরায়েলের দিকে রকেট বা মিসাইল ছুটে আসছে। কিছু দিন আগে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর একজন শীর্ষ নেতা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়। এরপর ২০০টির বেশি রকেট ছোড়ে লেবানন। এ ঘটনার কয়েক দিনের মাথায় লেবাননে যুদ্ধ পরিকল্পনা অনুমোদন করল ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। সেনা সদস্যদের প্রস্তুত রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ধারণা করা হচ্ছে, যে কোনো সময় লেবাননে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করতে পারে ইসরায়েল। এ নিয়ে সীমান্তবর্তী শহরগুলোতে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এ পরিস্থিতিতে দেওয়া ভাষণে হাসান নাসরুল্লাহ বলেন, যুদ্ধ শুরু হলে ইসরায়েলের কোনো অংশ নিরাপদ থাকবে না। আমরা যুদ্ধ চাই না। তবে ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে প্রস্তুত।

এ সময় তিনি সাইপ্রাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, যদি ইসরায়েলকে তার আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেয় তাহলে সাইপ্রাসও টার্গেটে পরিণত হবে।

তার মতে, লেবাননে হামলার জন্য সাইপ্রাসের বন্দর ও ঘাঁটি ইসরায়েল ব্যবহারের অনুমতি পেতে পারে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যদি তা বাস্তবে পরিণত হয় তবে সাইপ্রাসকে যুদ্ধের অংশ ভেবে নেবে হিজবুল্লাহ ও তাদের মিত্ররা।

বর্তমানে সাইপ্রাস ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে তাদের কোনো ভূমি বা ঘাঁটি সুবিধা দিচ্ছে না। তবে অতীতে ইসরায়েলকে মাঝেমধ্যে বিমান মহড়া চালানোর জন্য তার আকাশসীমা ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিল। যদিও তা কোনো যুদ্ধের সময় ছিল না।

সাইপ্রাস ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে কোনো ভূমি বা ঘাঁটি সুবিধা দেওয়ার জন্য পরিচিত নয়, তবে অতীতে ইসরায়েলকে মাঝেমধ্যে বিমান মহড়া চালানোর জন্য তার আকাশসীমা ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে, যদিও সংঘর্ষের সময় কখনোই নয়।

সাইপ্রাসে দুটি ব্রিটিশ ঘাঁটি রয়েছে। দেশটি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশের উপনিবেশ ছিল। এ ঘাঁটিগুলো সিরিয়া এবং সম্প্রতি ইয়েমেনে হামলার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এ বিষয়ে সাইপ্রাস সরকারের কোনো বক্তব্য নেই।

হিব্রু মিডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ব্যর্থ করতে সাহায্য করে ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্স। তাদের ফাইটার জেট ও রিফুয়েলিং বিমান সাইপ্রাসের ঘাঁটি থেকে যাত্রা করেছিল।

তিনি আরও বলেন, আমাদের হাতে এমন কিছু অস্ত্র আছে যা এখনো আমরা জনসম্মুখে নিয়ে আসিনি।

ইসরায়েল যদি আমাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ না থামায় তাহলে ভূখণ্ডটিতে আক্রমণ করার পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগোচ্ছি। আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে ড্রোন ও মিসাইল মজুত আছে। আরও ড্রোন উৎপাদন চলছে, যা দিয়ে ইসরায়েলের প্রতিটি অংশ তছনছ করা সম্ভব বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

হিজবুল্লাহ নেতা জল, আকাশ ও স্থল থেকে একযোগে ইসরায়েলে হামলা করা হবে বলে জানান।

এ ছাড়া ফিলিস্তিনের গাজার সমর্থনে ইসরায়েলে চলমান রকেট হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন এ নেতা। তিনি বলেন, গাজায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির আগ পর্যন্ত নির্যাতিতদের সমর্থনে হামলা অব্যাহত রাখা হবে।

এদিকে নাসরাল্লাহর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডৌলিডস বলেছেন, তার দেশ এই অঞ্চলে বা অন্য কোথাও কোনো সামরিক অভিযানে কোনোভাবেই জড়িত নয়। হিজবুল্লাহ নেতার এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদ করে তিনি বলেন, সাইপ্রাস সামরিক অভিযানে জড়িত বর্তমানের এমন অন্তত একটি চিত্র যেন উপস্থাপন করা হয়।

গত বছরের শেষভাগ থেকে ইসরায়েলে হামলার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। মঙ্গলবার তারা প্রায় ১০ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করে। ওই ভিডিওতে ইসরায়েলে হাইফা ও অন্যান্য শহরের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। লেবাননের গ্রুপটির দাবি, ড্রোন থেকে ইসরায়েলের সামরিক ও বেসামরিক অবস্থানের এই ভিডিও করা হয়েছে।

ওই ভিডিও প্রকাশের পর ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মনে আতঙ্ক ঢুকে গেছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আমরা লেবানন ও সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে খেলার নিয়ম পরিবর্তন করার খুব কাছে রয়েছি। পুরো মাত্রার একটি যুদ্ধের মাধ্যমে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীকে ধ্বংস করা হবে। আর লেবাননকে চরম শিক্ষা দেওয়া হবে।

প্রায় প্রতিদিন ছোটখাটো সংঘাতের ঘটনা ঘটছে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে। এতে ইসরায়েলে ১০ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১৫ জন সেনা ও রিভার্জ ফোর্সের সদস্য নিহত হয়েছে। আর সীমান্তের ওপারে থাকা লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী, তাদের ৩৪৩ জন সদস্য নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য সশস্ত্র গ্রুপের কয়েক ডজন সদস্য ও বেসামরিক নাগরিকও নিহত হয়েছে লেবাননে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, গাজায় আট মাস ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তবে এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারছে না তারা। এরই মধ্যে নতুন আরেকটি যুদ্ধ শুরু করতে চায় ইসরায়েল। তবে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে এ অঞ্চলে নতুন কোনো যুদ্ধ চায় না বলে জানিয়েছে। এ নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতাও চালাচ্ছে। শেষমেশ তাদের প্রচেষ্টা কতটুকু সফল হয় তাই দেখার বিষয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রতি সপ্তাহে সহায়তা দেবে জুলাই ফাউন্ডেশন : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

আন্দোলনে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি, সেই যুবলীগ নেতা মুছা গ্রেপ্তার

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে যমুনা গ্রুপ

জনবল নেবে স্যামসাং বয়সসীমা  ২১ থেকে ২৮ বছর 

বায়ুদূষণে শীর্ষে হ্যানয়, ঢাকার খবর কী

সুস্থ থাকতে ভাত নাকি রুটি, কী বলছেন চিকিৎসক

লিটনের শরীরে ৫ শতাধিক বুলেট

সপ্তম রাউন্ডে জমে উঠেছে প্রিমিয়ার লিগের লড়াই

পাচারের টাকায় আমিরাতে মিনি সিটি নিয়ে আসিফের স্ট্যাটাস

শেরপুরে ভয়াবহ বন্যায় ৭ জনের মৃত্যু

১০

তিন বিভাগে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস গবেষকের

১১

সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আক্ষেপ জ্যোতির

১২

১৩ জেলায় দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

১৩

ভারতীয় দলে আচমকা পরিবর্তন

১৪

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

১৫

৮ বিভাগেই বৃষ্টির পূর্বাভাস

১৬

৬ অক্টোবর : নামাজের সময়সূচি

১৭

কুমির ভেবে ঘড়িয়াল বেঁধে রাখলেন স্থানীয়রা

১৮

ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা

১৯

টাঙ্গাইলে কুকুরের কামড়ে শিশুসহ আহত ২১

২০
X