তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু এখনো রহস্যের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। ইরান সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো কারণ বা তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ না করায় এ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে রাইসির সঙ্গে ওই সফরে থাকা এক মন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলেছেন ইরানের সাবেক এক আইনপ্রণেতা। ওই মন্ত্রীর রহস্যজনক আচরণ নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।
আগামী ২৮ জুন ইরানে আগাম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাকে ঘিরে এরই মধ্যে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন প্রার্থীরা। রাইসির আকস্মিক মৃত্যু তারই মন্ত্রিসভার এক সদস্য মেহেরদাদ বাজরপাশের প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার পথ খুলে দিয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি স্বাভাবিক মনে হলেও রাইসির মৃত্যুর পর তার প্রার্থিতা ঘোষণা সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
আর সেই সন্দেহের বীজ বুনে দিয়েছেনে ইরানেরই সাবেক আইনপ্রণেতা গোলাম আলি জাফরজাদেহ ইমানাবাদি। শুক্রবার (০৭ জুন) ইরানি গণমাধ্যম এসলাহাত নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি রাজরপাশের দিকে সন্দেহের আঙুল তোলেন। এসলাহাত নিউজ সংস্কারপন্থি ঘেঁষা গণমাধ্যম বলে পরিচিত। ইমানাবাদির অভিযোগ, শেষ মুহূর্তে কেন রাইসির হেলিকপ্টার থেকে নেমে গিয়েছিলেন বাজরপাশে।
ইমানাবাদি বলেন, রাইসি তার খুব কাছেই সাপ পুষছিলেন। এই সরকারি মন্ত্রীদের দেখে বিভ্রান্ত হতে হচ্ছে, যারা মাত্র দুই সপ্তাহ আগে শোকের মধ্যে ছিলেন, এখন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। হঠাৎ মনের এমন পরিবর্তন কেন? প্রশ্ন করেন ইমানাবাদী। রাইসির মৃত্যুর পর তারই মন্ত্রিসভার ৫ জন সদস্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য নাম লিখিয়েছেন। বিষয়টা অনেকের কাছে খটকা লেগেছে।
রাইসির সরকারে সড়ক ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বাজরপাশের কাঁধে ছিল। দুর্ঘটনার দিন যে তিনটি হেলিকপ্টার ছিল, তারই একটিতে ছিলেন বাজরপাশে। কিন্তু তার রাইসির হেলিকপ্টারে থাকার কথা ছিল। যদিও একেবারে শেষ মুহূর্তে রাইসির হেলিকপ্টারে ওঠা থেকে বিরত থাকেন বাজরপাশে। এই ঘটনাকে সামনে এনে এই মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ইমানাবাদী। এখন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার দাবি জানাচ্ছেন তিনি।
ইরান ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাইসির মরদেহ খুঁজে পাওয়ার আগেই এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে হঠাৎ করে পরিকল্পনা পরিবর্তন করেছেন বাজরপাশে। তিনি রাইসির হেলিকপ্টারে উঠতে অস্বীকৃতি জানানোর খবরও সামনে আসতে থাকে। এদিকে ইরানি সাংবাদিক ফারিবোরজ কালানতারি দাবি করেছেন, রাইসির মৃত্যুর তিন দিন পরই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেন বাজরপাশে। এ নিয়ে ওইদিন নিজের টিমের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
রাইসির মৃত্যুরহস্য নিয়ে জট কাটছে না। আবার এর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পৃক্ততা আছে, তেমনটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য-প্রমাণও ইরানের হাতে নেই। বরং রাইসির মৃত্যুর পর দেশটির কয়েকজন কর্মকর্তার রহস্যজনক আচরণের খবর সামনে আসছে। ইরানের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বাজরপাশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ, এসব ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে হচ্ছে।
মন্তব্য করুন