মুসলিম বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইরাকের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। তিনি বেঁচে থাকতে আর যাই হোক ফিলিস্তিনের দিকে তাকাতে খুব একটা সাহস দেখাত না ইসরায়েল।
কিন্তু সাদ্দামের মৃত্যুর পর মুসলিম বিশ্বে আর এমন একক কোনো নেতা নেই, যার ভয়ে নিজেদের গুটিয়ে রাখবে তেল আবিব। তবে ইরাকের এই লৌহমানবের ভয়েই সামরিক শক্তিতে নিজেদের বলীয়ান করে তুলেছে ইসরায়েল।
৩৩ বছর আগে ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক মিসাইল দিয়ে মুহুর্মুহু হামলা চালান সাদ্দাম হোসেন। মধ্যপ্রাচ্যে অবৈধভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯১ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথমবার এমন ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলার মুখে পড়েছিল দেশটি।
তখনও এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি ইসরায়েল। কিন্তু ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের চালানো ওই হামলা ইসরায়েলকে পুরোপুরি বদলে দেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আরও শক্তিশালী করে তোলে ইসরায়েল।
১৯৯১ সালে গালফ যুদ্ধ শুরু করেন সাদ্দাম হোসেন। তখন ইসরায়েলের ইহুদিবাদী কর্মকাণ্ডের কারণে দেশটিতে ৪৩টি স্কাড মিসাইল দিয়ে হামলা চালান তিনি। ইসরায়েলের তেল আবিবসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ শহরে ৩৯ দিন ধরে এই হামলা চালানো হয়। সাদ্দামের ছোঁড়া মিসাইলে বিষাক্ত গ্যাস থাকতে পারে এমন শঙ্কায় ইসরায়েলিরা তখন মুখে মাস্ক পড়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সাদ্দাম কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করেননি।
ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভয় হয়েছিল, পাল্টা হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল। এতে বিভিন্ন আরব দেশ একজোট হয়ে বড় যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
এরপরই ইরাককে মোকাবিলায় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। আর ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সুরক্ষা দিতে প্যাট্রিয়ট মিসাইল মোতায়েনে তেল আবিবকে বোঝাতে সক্ষম হয় ওয়াশিংটন। কিন্তু তখনকার প্যাট্রিয়ট মডেল ইরাকের স্কাড মিসাইলের সামনে টিকতে পারেনি।
এরপর নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমূল বদল করে ইসরায়েল। ১৯৯১ সালেই ইসরায়েলের এয়ার ডিফেন্স নেটওয়ার্কে অ্যারো মিসাইল যুক্ত করা হয়।
কিন্তু এখন দেশটির আকাশ নিরাপত্তায় অ্যারো-২ ও অ্যারো-৩ মিসাইল রয়েছে। গেল ৯ নভেম্বর ইয়েমেনের বিদ্রোহীদের ছোড়া একটি মিসাইল প্রতিহত করতে সক্ষম হয় অ্যারো-৩ মিসাইল। বলা হয়ে থাকে, সেবারই প্রথম ‘আকাশে লড়াই হতে দেখেছে বিশ্ব’।
এ ছাড়া দেশীয় প্রযুক্তিতে মাঝারি পাল্লার ডেভিড স্লিং সিস্টেম তৈরি করেছে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের মে মাসে গাজা থেকে ছোড়া রকেট প্রথমবার সফলভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম হয় এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্বল্প পাল্লার আয়রন ডোম হিসেবে পরিচিত। মূলত গাজা ও লেবানন থেকে ছোড়া রকেট হামলা প্রতিহতে এই ব্যবস্থার ব্যবহার হয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি।
ইরাকের হামলার পর যু্ক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বলেছিল, যদি তারা আর কখনও মনে করে আক্রমণের শিকার হতে পারে, তাহলে ইরাকে জেরিকো মিসাইল ছুড়তে পারবে। কিন্তু যথেষ্ট সক্ষম না হওয়ায় তখন জেরিকো মিসাইল ব্যবহার করেনি ইসরায়েল। কিন্তু বর্তমানে ইসরায়েলের হাতে থাকা জেরিকো-৩ মিসাইলের রেঞ্চ ৩ হাজার মাইল পর্যন্ত। আবার দেশটির নৌবাহিনীর কাছে জার্মানির তৈরি ডলফিন সাবমেরিন রয়েছে, যেগুলো ক্রুজ মিসাইল ছুড়তে সক্ষম।
মন্তব্য করুন