ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে লাগামহীন চাপে ফেলা তো দূরের কথা, আরব নেতাদের অনৈক্যের কারণে থামানোই যাচ্ছে না গাজা যুদ্ধ। এত আরব দেশের মধ্যে বসে বুক ফুলিয়ে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে যাচ্ছে ইসরায়েল।
সম্প্রতি গাজা যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করতে এক বৈঠকে বসেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং কয়েকজন সিনিয়র আরব কর্মকর্তা। কিন্তু সেই বৈঠক থেকে রেগে বেরিয়ে যান এক আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ নিয়ে তৈরি হয় ব্যাপক শোরগোল।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে মিটিংয়ের এক ফাঁকে গেল ২৯ এপ্রিল ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও এতে ছিলেন সৌদি আরব, মিসর, জর্ডান, কাতার, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ফিলিস্তিনী মন্ত্রী হুসেইন আল-শেখও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব রাষ্ট্রগুলোর অনুরোধে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভেতর সংস্কার এবং নতুন সরকার গঠনে কাজ করছেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। অথচ তিনি কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন পাচ্ছে না।
মাহমুদ আব্বাসের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টার এমন অভিযোগ শুনে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ।
বৈঠকে থাকা কয়েকটি সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে। জেরুজালেম পোস্ট জানায়, আমিরাতের মন্ত্রী বৈঠকে বলেন, তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভেতর উল্লেখযোগ্য কোনো সংস্কার দেখতে পাননি। এ সময় তিনি ফিলিস্তিনের নেতৃত্বকে ‘আলি বাবা ও চল্লিশ চোরের’ সঙ্গে তুলনা করেন। এমনকি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সিনিয়র কর্মকর্তাকে ‘অযোগ্য’ বলেও মন্তব্য করেন আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, প্রকৃত সংস্কার ছাড়া তার সরকার কেন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে আর্থিক সহায়তা দিতে যাবে? তখনই চিৎকার করে ওঠেন ফিলিস্তিনি মন্ত্রী আল-শেখ।
তিনি বলেন, কীভাবে সংস্কার করতে হবে, তা কারও কাছ থেকে শিখবে না ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে থাকা সূত্রগুলো জানিয়েছে, এ সময় দুই আরব নেতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান। তিনি বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়া একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
কিন্তু পরিস্থিতি ততক্ষণে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। উভয় আরব নেতা উচ্চ শব্দে চিৎকার করতে থাকেন। একপর্যায়ে রেগে গিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যান আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তার পেছন পেছন বেরিয়ে যান জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি। কয়েক মিনিট পর তিনি আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে আবার রুমে প্রবেশ করেন। অভ্যন্তরীণ এমন লড়াইয়ের সাক্ষী হওয়ায় ব্লিংকেনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাতে বোঝাই যায়, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদের মধ্যে অবিশ্বাসের ফাটল প্রবল।
আব্বাসের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ দাহলান, যিনি মোহাম্মদ বিন জায়েদের ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত। এ জন্য বিন জায়েদের সঙ্গে আব্বাসের দ্বন্দ্ব রয়েছে।
আর আমিরাত দীর্ঘদিন ধরেই আব্বাস ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছে। ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠকে সেই রেষারেষির এক ঝলক দেখা মেলে।
মন্তব্য করুন