নজর ঘোরালেই সীমানার ওপারে শত্রু। ৭ দশকের বেশি সময় ধরে এমন আতঙ্কই বুকের মধ্যে পুষে রেখেছে ইসরায়েল।
অবৈধ রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে অন্য দেশ থেকে ইহুদিদের উড়িয়ে এনে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড একটু একটু করে গিলে খাচ্ছে দেশটি। কিন্তু কখনও শান্তির দেখা মেলেনি।
স্বাধীনতার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের অতর্কিত হামলা সব সময় তটস্থ রেখেছে ইসরায়েলকে। আশপাশের দেশগুলোর সমমনা যোদ্ধারাও ইসরায়েলকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দিচ্ছে না।
কয়েক শ কিলোমিটার দূর থেকে ঘরের কোণে বসেই মিসাইলের বোতাম চেপে দেয় যোদ্ধারা। আর সেই মিসাইল গিয়ে আঘাত হানে ইসরায়েলে।
মিসাইলের আতঙ্কে ক্ষণে ক্ষণে ইসরায়েলে বেজে ওঠে সাইরেন। তাই ইসরায়েলি নেতাদের ভাবনাজুড়ে শুধু যুদ্ধ আর আতঙ্ক। ইসরায়েলের এই আতঙ্কের ভাগীদার আরও একটি দেশ, তার নাম যুক্তরাষ্ট্র।
নিজেদের পরম মিত্রকে বাঁচাতে অস্ত্র দেওয়া থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যে নিজের সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে ওয়াশিংটন।
ইরানের প্রক্সিরা ইসরায়েলে নিয়মিত বিরতিতে হামলা চালায়। সাম্প্রতিক সময়ে সেই হামলার ধারাবাহিকতা বেড়ে গেছে।
তবে ইরাক থেকে যে হারে হামলা শুরু হয়েছে, তাতে আতঙ্কে আছেন তেল আবিবের কর্মকর্তারা। ইসরায়েলি ও মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছে, এসব হামলা ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে। তারপরও অন্তত দুটি মিসাইল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।
গত মে মাস থেকে নিয়মিত ক্রুজ মিসাইল ছুড়ে যাচ্ছে ইরানের মদদপুষ্ট ইরাকের যোদ্ধারা। ক্রুজ মিসাইল আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য ধ্বংস করা কিছুটা কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির একজন ফেলে মাইক নাইটস বলেছেন, হামলার পরিমাণ এবং অস্ত্র ব্যবস্থায় ভিন্নতা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। এটাই ইসরায়েলিদের কাজ আরও কঠিন করে দিয়েছে। বাড়িয়ে দিয়েছে আর্থিক খরচও।
এসব বিষয়ে ইরানের মদদপুষ্ট বিভিন্ন গ্রুপ, যেগুলো প্রতিরোধের অক্ষশক্তি নামে পরিচিত, তাদের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। এসব সশস্ত্র গ্রুপ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য আঞ্চলিক কর্মকর্তারাও রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দিয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ইরাকের কাতেইব হিজবুল্লাহ এবং নুজাবা ওয়াশিংটনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে। ইরান এবং লেবাননের হিজবুল্লাহর মধ্যেও নাকি ইরাকি এই দুই গ্রুপ নিয়ে অস্বস্তি আছে।
কারণ হচ্ছে, তারা এমন কোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে যা অক্ষশক্তির অন্য গ্রুপগুলো চায় না। এই পুরো নেটওয়ার্কের মাথা ধরা হয় ইরানকে। আর সবচেয়ে সংগঠিত গ্রুপ হচ্ছে হিজবুল্লাহ। অতীতেও তারা ইরাকি সশস্ত্র গ্রুপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইসরায়েলের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেওয়া এই ইরাকি গ্রুপগুলো ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতের পর মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। এরপর আস্তে আস্তে ফুলে ফেঁপে উঠেছে এই গ্রুপগুলো।
এই গ্রুপগুলো সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল আসাদ সরকারের সমর্থনে লড়াই করেছে। এমনকি ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী এলাকায় কিছু অঞ্চলও দখলে সমর্থ হয় তারা। ২০২১ ও ২০২২ সালে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ড্রোন হামলার দাবিও করেছিল ইরাকি গ্রুপ।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জর্ডানে মার্কিন আউটপোস্টে ড্রোন হামলা চালায় ইরাকি গ্রুপগুলো। এতে তিনজন মার্কিন সেনা নিহত হয়। এরপর ইরাক ও সিরিয়ায় একের পর এক বিমান হামলা চালাতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। তখন তড়িঘড়ি ইরাক ছুটে যান ইরানের এলিট বাহিনী কুদস ফোর্সের কমান্ডার। তিনি ইরাকি মিলিশিয়াদের তাদের হামলা থামাতে বলেন। এরপর ইরাকি গ্রুপগুলো মার্কিন টার্গেটে হামলা বন্ধ করলেও তাদের নজর পড়েছে এবার ইসরায়েলে।
মন্তব্য করুন