হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর ইরানে যেন সব কিছু থমকে গেছিল। তবে অল্প দিনেই শোক কাটিয়ে উঠে ২৮ জুন আগাম প্রেসিডেন্টের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটি। এই নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। সাবেক প্রেসিডেন্টসহ কয়েকজন আইনপ্রণেতা এই নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে তাদের ভাগ্য ঝুলে আছে গার্ডিয়ান কাউন্সিলের হাতে। এই কাউন্সিলের অনুমোদন না পেলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না কোনো প্রার্থী। জনপ্রিয় সাবেক প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে পার্লামেন্টের স্পিকার, সবাই বসতে চান রাইসির চেয়ারে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন সাবেক একজন নারী আইনপ্রণেতা জোহরে ইলাহিয়ান। গার্ডিয়ান কাউন্সিলের অনুমোদন পেলে তিনিই হবেন ইরানের প্রথম নারী, যিনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। তবে সেটা বাস্তবে কতটুকু ফলবে সেটা সময়ই বলে দেবে। লন্ডনভিত্তিক ফারসি ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল ইরান ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ৫৭ বছর বয়সী ইলাহিয়ান পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনি পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা ও বিদেশ নীতি বিষয়ক কমিটির সাবেক সদস্য। এর আগে তিনি দুই বার পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাই পার্লামেন্টের পথঘাট খুব ভালো করেই চেনাজানা আছে তার। প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর ইলাহিয়ান জানিয়েছেন, তিনি দুর্নীতি ও অর্থনীতি নিয়ে মনোযোগ দিতে চান। ইলাহিয়ান নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন কিনা তা নির্ধারিত করবে গার্ডিয়ান কাউন্সিল। তারাই সংবিধানের ব্যাখ্যা করে থাকে। এর আগেও বিভিন্ন নারীর প্রার্থিতা বাতিল করে দিয়েছিল গার্ডিয়ান কাউন্সিল। ইরানের সংবিধানের ১১৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, প্রার্থীকে অবশ্যই রাজনৈতিক বা ধর্মীয় ‘ব্যক্তি’ হতে হবে। এখানেই বিতর্কের তৈরি হয়েছে। ২০০৯ সালে জনপ্রিয় ইরানি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ইলাহিয়ানকে মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তবে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আরও কয়েকজন কট্টরপন্থি নেতা মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন তেহরানের মেয়র আলিরেজা জাকানি। সংস্কারবাদী আইনপ্রণেতা এবং সাবেক প্রথম ডেপুটি স্পিকার মাসুদ পেজেসকিয়ান এবং সর্বোচ্চ নেতার অফিসের একজন সদস্য ভাহিদ হাগানিয়ানও প্রেসিডেন্ট হতে চান। আগামী বছর ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গেল মে মাসে আকস্মিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান রাইসি। এতে হঠাৎ করে ইরানের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। সেই শূন্যতা পূরণে কে হবেন ইরানের পরবর্তী কাণ্ডারি সেই অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্ববাসী। কারণ, তেহরানের মসনদ হচ্ছে একটি জ্বলন্ত উনুন, সেখানে যে-ই বসুক না কেন, তাকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলা করতে হবে। আর আঞ্চলিক আরব শত্রুরা তো রয়েছেই।
মন্তব্য করুন