হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। তার হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় নাশকতা বা সাইবার আক্রমণ হয়েছিল কি না সে বিষয়ে প্রতিবেদনে দিয়েছে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী। বুধবার (২৯ মে) ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাইসির হেলিকপ্টারে নাশকতা বা সাইবার আক্রমণের প্রমাণ মেলেনি। বুধবার ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছেন।
এর আগে গত ২৯ পূর্ব আজারবাইজানে একটি জলাধার উদ্বোধনের পর ফেরার পথে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ অন্তত আটজন হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। এ সময় প্রেসিডেন্টসহ সবাই নিহত হন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ এবং বিধ্বস্ত অংশের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে বিচ্ছুরণের ধরন ও মূল অংশ থেকে খণ্ডিত অংশের দূরত্ব বিবেচনা করা হয়েচে। ফলাফলে দেখা গেছে, পাহাড়ের ঢালে আঘাতের ফলে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, হেলিকপ্টারটিতে নাশকতার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ঘনকুয়াশা ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উল্লেখ করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইবার হামলা বা ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ারের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেনি। দুর্ঘটনার সময়ে হেলিকপ্টারের কমিউনিকেশন বা ফ্রিকোয়েন্সিতে কোনো সমস্যা ছিল না। দুর্ঘটনার মল কারণ বের করার আগ পর্যন্ত আরও পরীক্ষা ও গবেষণা চলবে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার বিষয়ে চলতি মাসের ২৩ তারিখে প্রথম দেশটির সেনাবাহিনী প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে বলা হয়, হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষে গুলি বা বুলেটের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পাহাড়ের ঢালে আঘাতের কারণেই বিমানে আগুন ধরে যায় বলেও নিশ্চিত করেন তদন্তকারীরা।
সেনাবাহিনীর তদন্তে আরও বলা হয়, হেলিকপ্টারটি নির্ধারিত রুট থেকে বিচ্যুত হয়নি। এমনকি এটি বিধ্বস্ত হওয়ার দেড় মিনিট আগেও অন্য দুটি পাইলটের সঙ্গে এর যোগাযোগ ছিল।
ইব্রাহিম রাইসি ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট তিনি। একাধারে রাজনীতিবিদ ও বিচারক রাইসি বিশ্ব রাজনীতিতেও অন্যতম প্রভাবশালী নেতাদের একজন। ইব্রাহিম রাইসি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবেও পরিচিত। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে দেশটির প্রধান বিচারপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার কারণেই দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা কমেছে।
তিন বছর আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ইব্রাহিম রাইসিকে মনে করা হয় একদিন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির উত্তরসূরি হবেন।
ইব্রাহিম রাইসির জন্ম ১৯৬০ সালের ১৪ ডিসেম্বর উত্তর-পূর্ব ইরানের পবিত্র শহর মাশহাদে। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি তেহরানের পার্শ্ববর্তী শহর কারাজের প্রসিকিউটর-জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯৮৯ থাকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তেহরানের প্রসিকিউটর-জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন রাইসি। ২০০৪ সাল থেকে তিনি এক দশক জুডিশিয়াল অথোরিটির উপপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে তাকে বিচার বিভাগের প্রধান নিযুক্ত করেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।
প্রেসিডেন্ট রাইসি পরবর্তীতে ৮৮ সদস্যের বিশেষজ্ঞ সভার উপচেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা নির্বাচনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে এ সভা। ২০২১ সালে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে তিনি ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
মন্তব্য করুন