ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) নিজ শহর মাশহাদে তাকে দাফন করা হয়েছে। ব্রিটিশি সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতের চার দিন পর ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে দাফন করা হয়েছে। শিয়াদের অন্যতম ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ইমাম রেজার মাজারে ৬৩ বছর বয়সী এ নেতাকে দাফন করা হয়।
টেলিভিশনের বিভিন্ন ফুটেজে দেখা যায়, প্রেসিডেন্টের দাফন উপলক্ষে উত্তর-পূর্ব শহরটির প্রধান সড়কে মানুষের বিপুল উপস্থিতি দেখা গেছে।
এর আগে আনাদোলু এজেন্সি জানায়, হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সবচেয়ে বড় জানাজা হয় তেহরানে। বুধবার (২২ মে) রাজধানীর তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে তার জানাজায় লাখো মানুষ অংশ নেয়। এ দিন রাইসিকে সম্মান জানাতে অংশ নেন ৬৮ দেশের প্রতিনিধি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশি গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অভ্যর্থনা জানান ইরানের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মোখবার, ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাগেরি কানি এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা। সংকটকালে ইরানের পাশে থাকায় বিদেশি রাষ্ট্রের নেতাদের ধন্যবাদ জানান তারা।
জানাজায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ইব্রাহিম রাইসির রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দক্ষতা ও বন্ধুত্বভাবাপন্ন মনোভাব স্মরণ করেন এবং নিহত সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি তেহরানে অনুষ্ঠিত জানাজায় ইমামতি করেন। এ সময় উপস্থিত থাকাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি, ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, আজারবাইজানের প্রধানমন্ত্রী আলি আসাদভ, রাশিয়ান ডুমার চেয়ারম্যান ব্যাচেস্লাভ ভোলোদিন, হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ, হিজবুল্লাহর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল নাইম কাসেম, হুতির মুখপাত্র মোহাম্মদ আবদুল সালাম, আফগানিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী মোল্লা আব্দুল গান্দাব ব্র্যান্দার আখুন্দ, সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুসেইন আরনাস, তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট গুরবাংগুলি বেরদিমুহামেদভ, তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস বিন সাইদ, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাবিহ বেরি প্রমুখ।
হেলিকপ্টারে রাইসি ছাড়াও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমতি এবং এই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলি আলে-হাশেম ছিলেন।
ইব্রাহিম রাইসি ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট তিনি। একাধারে রাজনীতিবিদ ও বিচারক রাইসি বিশ্ব রাজনীতিতেও অন্যতম প্রভাবশালী নেতাদের একজন। ইব্রাহিম রাইসি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবেও পরিচিত। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে দেশটির প্রধান বিচারপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার কারণেই দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা কমেছে।
ইব্রাহিম রাইসির জন্ম ১৯৬০ সালের ১৪ ডিসেম্বর উত্তর-পূর্ব ইরানের পবিত্র শহর মাশহাদে। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি তেহরানের পার্শ্ববর্তী শহর কারাজের প্রসিকিউটর-জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯৮৯ থাকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তেহরানের প্রসিকিউটর-জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন রাইসি। ২০০৪ সাল থেকে তিনি এক দশক জুডিশিয়াল অথোরিটির উপপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে তাকে বিচার বিভাগের প্রধান নিযুক্ত করেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।
প্রেসিডেন্ট রাইসি পরবর্তীতে ৮৮ সদস্যের বিশেষজ্ঞ সভার উপচেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা নির্বাচনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে এ সভা। ২০২১ সালে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে তিনি ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
মন্তব্য করুন