ইরানে নতুন খেলা শুরু হয়েছে। ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু দেশটিতে ক্ষমতার সংঘাত উসকে দিতে পারে বলে শঙ্কায় ছিল পশ্চিমারা। এখন রাইসির মৃত্যুর সপ্তাহ পেরোনোর আগেই, তার আভাস মিলছে।
ধারণা করা হচ্ছিল, রাইসি ইরানের পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা হবেন। কিন্তু তার মৃত্যু যেন সেই হিসাব-নিকাশ বদলে দিয়েছে। ইরানের ভেতর ক্ষমতার লড়াই মধ্যপ্রাচ্যকে কতটা বিপজ্জনক করে তুলবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে।
ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানের নেতারা পরিবারতন্ত্র নির্মূলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু রাইসির মৃত্যু সেই নীতি থেকে সরে আসার পথ খুলে দিয়েছে।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা রাইসি ছিলেন তার প্রিয় শিষ্য। তাই রাইসিই যে ইরানের পরবর্তী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হচ্ছেন, তা দেশটির ভেতর ও বাইরে সবার কাছেই অনুমেয় ছিল। কিন্তু কট্টরপন্থি রাইসির আকস্মিক মৃত্যু সেই সমীকরণ বদলে দিয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতাই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ। একই সঙ্গে দেশের পররাষ্ট্র নীতি কী হবে, তা-ও নির্ধারণ করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। ইরানে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনির মৃত্যুর ১৯৮৯ সালে খামেনেয়ী সর্বোচ্চ নেতার পদে আসীন হন।
রুহুল্লাহ খামেনি পরিবারতন্ত্রের ঘোর বিরোধী ছিলেন, তাই তার ছেলে থাকা সত্ত্বেও খামেনেয়ীই হন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা।
রাইসির ক্ষেত্রেও এমন কিছুই ভাবা হচ্ছিল। খামেনেয়ীর বয়স এখন ৮৫ বছর। তিনি প্রায়ই অসুস্থ থাকছেন। আবার রাইসিকে খামেনেয়ীর ডান হাতও বলা হয়। দীর্ঘদিন বিচার বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা এবং কট্টরপন্থি হিসেবে নিজের আনুগত্যের পরিচয় দেওয়া রাইসি তাই ইরানের পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার হকদার ছিলেন।
রোববার এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত সমীকরণ এমনই ছিল, কিন্তু এখন দৃশ্যপটে আসছে অন্য কেউ।
আর সেই অন্য কেউ হচ্ছেন খামেনেয়ীর দ্বিতীয় ছেলে মোজতাবা। ধারণা করা হয়, পর্দার আড়াল থেকেই তিনি কলকাঠি নাড়েন। জন হপকিন্স স্কুল অব অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক অধ্যাপক ভালি নাসর বলেছেন, একটি গ্রুপ চাইছিল পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা রাইসিই হোক। কিন্তু এখন আর তাদের কোনো প্রার্থী নেই। তাই মোজতাবাপন্থিদের রাস্তা খুলে গেছে।
৫৫ বছর বয়সী মোজতাবা একটি মধ্যম সারির ধর্মীয় নেতা। তিনি শিয়াদের পবিত্র শহর কুমে একটি মাদ্রাসায় ধর্মতত্ত্ব পড়ান।
খামেনেয়ীর অফিসের ঘনিষ্ঠ ইরানি একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিবারতন্ত্রের শাসন নিয়ে খামেনেয়ীর নিজেরও আপত্তি রয়েছে। সেক্ষেত্রে মোজতাবা বা রুহুল্লাহ খামেনির নাতি আলি খামেনেয়ীর সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার পথরুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে খামেনেয়ী কোনো নেতা নির্বাচন না করে গেলে, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে।
ইরানের একজন সাবেক কর্মকর্তা বলছেন, পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা কে হবেন, তার লড়াইয়ে হয়তো বিপ্লবী গার্ডস এবং কুমের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতাদের মাঠে নামতে দেখা যেতে পারে। আর রাইসির মৃত্যু এমন পরিস্থিতির তৈরি করে দিয়েছে। তাই রাইসির দুর্ঘটনার খবরে ওয়াশিংটনে মার্কিন কর্মকর্তাদের ঘুম উবে গিয়েছিল। কেননা তাদের শঙ্কা ছিল, এতে হয় যুদ্ধ বাধবে না হলে আঞ্চলিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে।
মন্তব্য করুন