ইরানকে ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি কল্পনাও করা যায় না। সেই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসির মৃত্যুতে যেন থমকে গেছেন বিশ্ব নেতারা। শোকে বিহ্বল ইরানিরা। এদিকে ঘটনার আকস্মিকতা শেষ না হতেই চিরশত্রু ইসরায়েলের সম্পৃক্ততা আলোচনায় ওঠে এসেছে।
রোববার আজারবাইজানের সঙ্গে একটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে ফেরার পথে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান রাইসি। এ সময় তার সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও ছিলেন।
মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের ছড়ি ঘোরানোর জন্য ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। ইরানের শক্তি খর্ব না হলে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের খুঁটি যে শক্ত করা যাবে না, সেটা খুব ভালো করেই জানে ইসরায়েল।
আর ইরানও বুঝতে পেরেছে ইসরায়েল যত বেশি বন্ধু তৈরি করবে, তারা তত বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তাই ইরান বন্ধু রাষ্ট্র তৈরিতে বেশ মনোযোগী।
সে সঙ্গে ইসরায়েলকে চাপে রাখতে সবকিছু করার চেষ্টাই করে ইরান। তেমনি তেহরানকে দমাতেও প্রায়ই আততায়ী হামলা চালায় ইসরায়েল।
আর ভয়ানক এসব মিশন চালানোর জন্য ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের জুড়ি নেই। তাই রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পড়ার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় গুঞ্জন ছড়ায় এর সঙ্গে মোসাদের সম্পৃক্ততা আছে।
কিন্তু ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কেউই মুখ খুলছিলেন না। তাই সন্দেহ আরও ঘনীভূত হচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত মুখ খুলেছেন একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা। রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের সঙ্গে ইসরায়েলের ভূমিকা কী জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ওই ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, আমরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না।
ইসরায়েল সম্পৃক্ততা অস্বীকার করলেও এ নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। বলা হচ্ছে, রাইসির মৃত্যুতে সরাসরি লাভবান হবে ইসরায়েলই। কেননা রাইসির ছত্রছায়াতেই মধ্যপ্রাচ্যে তেজবান হয়েছে বিভিন্ন মিলিশিয়া গ্রুপ। আর গাজায় ইসরায়েলকে জিততে না দেওয়ার পেছনে ইরানি অস্ত্র ও মিলিশিয়াদের সমর্থন রয়েছে বলেই দীর্ঘদিনের অভিযোগ তেল আবিবের।
মধ্যপ্রাচ্যে কোনো রাজনৈতিক পটপরিবর্তন বা আততায়ী হত্যাকাণ্ড ঘটবে আর ইসরায়েল জানবে না, সেটা অনেকের কাছে অসম্ভব। ইসরায়েলের রয়েছে সবচেয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক।
কয়েকটি সূত্র বলছে, তেহরানে ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের তৎপরতা এত নিখুঁত যে, এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যার সফল অভিযান পরিচালনা করেছে মোসাদ। তাই দিন যত গড়াবে ইসরায়েলের দিকে সন্দেহের তীর আরও শক্তিশালী হবে।
এ বিষয়ে বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে দ্য ইকোনমিক টাইমস। তারা বলছে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈরিতার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ইরানি অনুমান করেছেন যে, এই দুর্ঘটনার পেছনে ইসরায়েল থাকতে পারে।
দামেস্কে ইরানি জেনারেলকে হত্যা এবং পরবর্তীতে ইরান-ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র হামলাসহ সাম্প্রতিক উত্তেজনা বিবেচনা করে এই তত্ত্বটি দ্রুত আকর্ষণ লাভ করছে।
এদিকে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এর আগে কখনো কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যার লক্ষ্যবস্তু করেনি। কিন্তু কে জানে- ইরানি স্বার্থের বিরুদ্ধে কার্যক্রমের জন্য পরিচিত মোসাদ তার সবচেয়ে বড় অভিযানটি সফলভাবে পরিচালনা করল কি না?
মন্তব্য করুন