বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস আজ (৩ মে)। বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আজ আলোচনা হচ্ছে। এ আলোচনায় গাজার সাংবাদিকদের অনেকটা আড়াল করে রাখছে পশ্চিমারা। অথচ সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জের দিক দিয়ে গোটা বিশ্বে ফিলিস্তিনের গাজাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ করে রেখেছে ইসরায়েল।
আলজাজিরার ভাষায়, গাজা সাংবাদিকদের জন্য এক মৃত্যুপুরী। কাজ করার জন্য সবচেয়ে মারাত্মক।
সংবাদমাধ্যমটির শুক্রবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রথম সাত মাসে ১০০-এর বেশি সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগ ফিলিস্তিনি। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) ও দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টের (আইএফজে) হিসাব এটি।
তবে গাজার মিডিয়া অফিসের হিসাবে, এ পর্যন্ত ১৪০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। অর্থাৎ যুদ্ধ শুরুর পর প্রতি সপ্তাহে পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
অপরদিকে ৩৪ হাজার ৫৯৬ জন নিহত এবং ৭৭ হাজার ৮১৬ জন গাজাবাসী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও ৮ হাজারের বেশি নিখোঁজ। অনেক গণকবর এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
অপরদিকে নিজ দেশের প্রশাসন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আইনি অবকাঠামো, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও নিরাপত্তা বিবেচনায়ও চাপে আছে ফিলিস্তিনিরা। আজ প্রকাশিত রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) সূচকে ফিলিস্তিনের অবস্থান ১৫৭তম। দেশটির বৈশ্বিক স্কোর ৩১ দশমিক ৯২।
সবচেয়ে ভালো অবস্থানে নরওয়ে। তাদের পয়েন্ট ৯১ দশমিক ৮৯। শীর্ষ দশের বাকি দেশগুলো হলো- ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও জার্মানি।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সাংবাদিকরা কতটুকু স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন, তা যাচাই করা হয়। এর মাধ্যমে মুক্ত গণমাধ্যম নিশ্চিতে দেশগুলোকে এক প্রকারের বৈশ্বিক চাপে ফেলা হয়।
এদিকে আরএসএফ’সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু ইসরায়েলের কাছে তারা কোনো পাত্তাই পাচ্ছে না।
আরএসএফের মধ্যপ্রাচ্য ডেস্কের প্রধান জোনাথন ড্যাঘের এপ্রিলে এক বিবৃতিতে বলেছেন, গাজার সাংবাদিকদের অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে। যারা চাইবে তাদের অবশ্যই সরিয়ে নিতে হবে এবং গাজার গেটগুলো আন্তর্জাতিক মিডিয়ার জন্য খুলে দিতে হবে। ফিলিস্তিনি সাংবাদিকতাকে জরুরি ভিত্তিতে রক্ষা করতে হবে।
শুক্রবার নিহত সাংবাদিকদের স্মরণে এক বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা একজন সাংবাদিককে হারাই তখন বাইরের বিশ্বের কাছে আমরা আমাদের চোখ ও কান হারাই। আমরা কণ্ঠহীনদের জন্য একটি কণ্ঠস্বর হারাচ্ছি।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের জানমাল রক্ষার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সত্যের মূল্য উদযাপনের জন্য এবং যারা সাহসের সঙ্গে কাজ করে তাদের রক্ষা করার জন্য।’
মন্তব্য করুন