সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে নিজেদের কনস্যুলেটে হামলার জবাবে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলে এ হামলায় শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে দেশটি। কিন্তু এর অনেকটি ড্রোন ইসরায়েলে পৌঁছার আগেই ভূপাতিত করে জর্ডান। দেশটির এ ধরনের ভূমিকায় স্থানীয় নাগরিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জর্ডানিরা বলছেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা করে তাদের সরকার বেঈমানি করেছে। ফিলিস্তিনের গাজায় নির্যাতিত মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যারা কয়েক মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন তারা খুবই মর্মাহত হয়েছেন। খবর ডয়চে ভেলের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে জর্ডানিরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এর মধ্যে ‘জর্ডানের রাজা ইসরায়েলকে রক্ষা করার জন্য তার নাগরিকদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ফেলেছিলেন’- এমন একটি পোস্ট এক্স-এ ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হচ্ছে।
পোস্টটির সঙ্গে জর্ডানের কারাক শহরে ড্রোন ধ্বংসাবশেষের একটি ছবি যুক্ত করা হয়েছে। শহরটি ইসরায়েলের সীমান্ত থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
এ পোস্টটি ব্যাপকহারে শেয়ারের পাশাপাশি এতে মন্তব্য করছেন অনেকে। সেখানে জর্ডান সরকারের কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। একজন এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘নিজেদের শহরে ক্ষেপণাস্ত্র ফেলে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে জর্ডান।’
এদিকে আত্মরক্ষার জন্য ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপনাস্ত্র ভূপাতিত করার দাবি করেছে জর্ডান। জর্ডান সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়, ‘এগুলো আমাদের জনগণ ও জনবহুল এলাকার জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল। তাই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে সঠিক তথ্যের পাশাপাশি জর্ডান নিয়ে অনেক ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। বাসিন্দাদের কেউ কেউ দাবি করছেন, ইরানের ভূপাতিত ক্ষেপণাস্ত্রে জর্ডানে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ভুল তথ্য বলে ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
এ ছাড়া ওই প্রতিবেদনে বেশ কয়েকজন জর্ডানির মন্তব্য তুলে ধরা হয়। তাতে হুসেইন নামে একজন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বলেন, ‘জর্ডান যেভাবে ইসরায়েলকে রক্ষা করেছে তাতে আমি খুবই বিরক্ত৷ এখানকার অনেকেই এটা মেনে নিচ্ছে না। আমরা ইরানকে সমর্থন করি না। গাজায় যা ঘটছে তারও নিন্দা জানাই। তবে গাজায় হামলা বাধাগ্রস্ত করে এমন যে কোনো পদক্ষেপের সঙ্গে একাত্মতা জানাই।’
মারিয়াম নামে আম্মানের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, ‘জর্ডানে ইরানের জনপ্রিয়তা নেই। কিন্তু আমি ইরানের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র জর্ডানের বাধা দেওয়া ও অনিচ্ছাকৃতভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া প্রত্যাখ্যান করি।’
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আম্মানে ইসরায়েলের দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে কয়েক হাজার স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। তারা ১৯৯৪ সালে ইসরায়েল ও জর্ডানের মধ্যে সই হওয়া শান্তি চুক্তি বাতিলেরও আহ্বান জানান। এরই মধ্যে ইসরায়েলে হামলা করে ইরান।
তেহরানের ওই হামলা প্রতিরোধে ইসরায়েলকে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ ময়দানে প্রকাশ্যে যুক্ত হয়েছে মুসলিম দেশ জর্ডানও। তারা কয়েক ডজন ইরানি ড্রোনগুলি করে ভূপাতিত করেছে।
রয়টার্স জানায়, ইসরায়েলের দিকে হামলা চালাতে উত্তর ও মধ্য জর্ডানের ওপর দিয়ে নিক্ষেপ করা কয়েক ডজন ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করেছে জর্ডান। মূলত জর্ডানের যুদ্ধবিমানগুলো ইরানের নিক্ষেপ করা এসব ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে।
এ ছাড়া অন্য ড্রোনগুলোকে ইরাক-সিরিয়া সীমান্তের কাছে আটকে দেওয়া হয় বলেও জানানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
এদিকে, ইরানের আধা-সরকারি বার্তাসংস্থা ফারস দেশটির একটি সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, তেহরানের প্রতিশোধমূলক হামলার সময় ইসরায়েলের সমর্থনে যে কোনো পদক্ষেপের জন্য জর্ডানকে নজরে রাখছে ইরান। এমনকি দেশটি (জর্ডান) ‘পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু’ হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে তেহরান।
মন্তব্য করুন