ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে ইসরায়েলি জাহাজ জব্দ করেছে দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর নৌসেনারা। এবার সেই জাহাজ জব্দের কারণ জানিয়েছে ইরান। সোমবার (১৫ এপ্রিল) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে সংবাদমাধ্যম ডেকান হ্যারাল্ডের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সোমবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেন, গত শনিবার (১৩ এপ্রিল) পর্তুগিজ পতাকাবাহী জাহাজ এমএসসি এআরআইইএসকে জব্দ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সমুদ্রসীমা নীতি লঙ্ঘন করায় জাহাজটিকে জব্দ করা হয়েছে। জাহাজটি ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট এতে কোনো সন্দেহ নেই বলেও জানান তিনি।
কানানি বলেন, হরমুজ প্রণালি ও পারস্য উপসাগরে জাহাজ চলাচলের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে চায় ইরান। জব্দ করা জাহাজটির গতিপথ বদলে ইরানের আঞ্চলিক জলসীমায় পাঠানো হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাহাজটি ইরান সরকারের প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। এ ছাড়া সমুদ্রসীমা আইন লঙ্ঘন করেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে জাহাজটিকে জব্দ করা হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট হরমুজ প্রণালি থেকে ইসরায়েলের একটি বিশালাকৃতির কার্গো জাহাজ ধরে নিয়ে গেছে ইরানের চৌকস বাহিনী বিপ্লবী গার্ডের নৌ-কমান্ডোরা।
বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, শনিবার এমএসসি এআরআইইএস নামের জাহাজটি জব্দ করেন বিপ্লবী গার্ডের সেনারা। ইরানি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, জাহাজটি জোডিয়াক মেরিটাইম শিপিং কোম্পানির। এই কোম্পানিটির মালিক হলেন ইসরায়েলের ধনকুবের ইয়াল ওফার। জাহাজটি পর্তুগালের পতাকাবাহী ছিল। হরমুজ প্রণালি থেকে জব্দ করার পর জাহাজটি এখন ইরানের সমুদ্রসীমায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
যুদ্ধ পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান ওয়ার মনিটরও জাহাজ দখলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানানো হয়েছে, হরমুজ প্রণালির কাছ থেকে ইরানের সেনারা এমএসসি এআরআইইএস নামের জাহাজটি দখলে নিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের এক সামরিক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এপিকে এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও পাঠিয়েছেন। সেটিতে দেখা গেছে, বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডোরা হেলিকপ্টার নিয়ে জাহাজটিতে নামছেন। ভিডিওতে জাহাজটির এক ক্রুকে বলতে শোনা যায়, ‘কেউ বাইরে যাবেন না।’ পরে তিনি সবাইকে জাহাজের ব্রিজে যাওয়ার জন্য বলেন।
ভিডিওটিতে আরও দেখা যায়, বিপ্লবী গার্ডের এক কমান্ডো হাঁটু গেড়ে বসে অন্যদের নিরাপত্তা দিচ্ছেন। ওই সময় হেলিকপ্টার থেকে অন্য আরও কমান্ডোরা নেমে আসেন।
জাহাজটি শুক্রবার দুবাইয়ে ছিল। শনিবার এটি হরমুজ প্রণালিতে আসে। ওই সময় জাহাজটি ট্র্যাকিং ডাটা বন্ধ করা ছিল। নিরাপত্তার জন্য গালফ অঞ্চল দিয়ে চলাচল করা সব ইসরায়েলি জাহাজ গত কয়েক দিন ধরে ট্র্যাকিং ডাটা বন্ধ করে চলছে। তবে পার পাচ্ছে না।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে দেশটির কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে একের পর এক হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিল ইরান। এরপর গত শনিবার গভীর রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে পাঁচ ঘণ্টা ধরে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইরান। হামলার একপর্যায়ে চিরশত্রু ইসরায়েলের দিকে কয়েক মিনিটের মধ্যে একযোগে অন্তত ১০০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে আইআরজিসির বিমানবাহিনী।
ইরানের একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিনশরও বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তেহরান। সেগুলোর বেশিরভাগ ইসরায়েল প্রতিহত করলেও অন্তত ৭টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের মাটিতে আঘাত হেনেছে।
ইরানি বার্তা সংস্থা ইরনা নিউজ জানিয়েছে, রেমন ঘাঁটিতে দ্রুতগতির ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে ইসরায়েল নিশ্চিত করেছে।
ইসরায়েলে ইরানের এ হামলায় সমর্থনকারী দেশগুলোকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা আশতিয়ানি বলেন, যদি কোনো দেশ তাদের আকাশসীমা ইসরায়েলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তাহলে আমরা তাদের চূড়ান্ত মোকাবিলা করব।
এক্সে হিব্রু ভাষায় এক পোস্টে তিনি বলেন, যদি কোনো দেশ ইরানের ওপর (সম্ভাব্য) আক্রমণের জন্য ইসরায়েলের জন্য তার মাটি বা আকাশসীমা উন্মুক্ত করে দেয়, তাহলে তারা আমাদের পক্ষ থেকে নিষ্পত্তিমূলক প্রতিক্রিয়া পাবে।
মন্তব্য করুন