গাজা যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইরান। মূলত চলতি মাসের শুরুর দিকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে ইসরায়েলি বোমা হামলার জবাবে শনিবার (১৩ এপ্রিল) গভীর রাতে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এই পাল্টা হামলা করেছে তেহরান। ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি দুই চিরশত্রু দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ পর্যন্ত বেধে যেতে পারে বলে সতর্ক করছেন তারা।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন যুদ্ধ ঠেকাতে কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা-তদবির করে চলেছে আরব উপসাগরীয় দেশগুলো। এক্ষেত্রে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দুই পরাশক্তি সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিশেষ করে ইরান, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার মতভেদ দূর করে তাদের আলোচনার টেবিলে বসাতে কাজ করছে দেশ দুটি। এই বিষয়ের সঙ্গে জানাশোনা আছে এমন কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশের রাজা-বাদশারা ইরান ও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছে। দীর্ঘদিনের বিরোধ কাটিয়ে নিজ নিজ স্বার্থে কাজ করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছে এসব দেশ। এরই অংশ হিসেবে ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে চুক্তি স্বাক্ষর করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি প্রধান দেশ সৌদি আরবও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় অনেক দূর এগিয়ে যায়। তবে গাজা যুদ্ধ শুরু হলে বাধ্য হয়ে এই প্রচেষ্টা থেকে সরে আসে রিয়াদ।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ বাধলে তা দ্রুত গতিতে উপসাগরীয় অন্য দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কেননা এই দুই চিরশত্রু দেশের মধ্যে ইরাক, সিরিয়া ও জর্ডানের মতো দেশ অবস্থিত। এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। আর ইসরায়েলকে রক্ষায় ইস্পাত-দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে প্রধান মিত্র ওয়াশিংটন।
এ বিষয়ের সঙ্গে জানাশোনা রয়েছে এমন একটি উপসাগরীয় সূত্র বলেছে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনা আর বাড়ুক তা কেউ চায় না। সবাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায়। এ জন্য বড় ধরনের টেলিফোন কূটনীতি জারি রয়েছে।
তিনি বলেন, চাপ শুধু ইরানের ওপর নয়। পাল্টা হামলা না করতে ইসরায়েলের ওপরও চাপ আছে। ইরানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলা পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে প্রভাবিত করবে।
আরেকটি উপসাগরীয় সূত্র জানিয়েছে, ইরান ও ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে উত্তেজনা না বাড়াতে চাপ দিচ্ছে ইরাক ও জর্ডান। ইতোমধ্যে ইসরায়েলকে সংযম দেখাতে বলেছে ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলোর মাধ্যমে উত্তেজনা আর না বাড়াতে ইরানে বার্তা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
সূত্রটি আরও বলেছে, এটা স্পষ্ট, ইরান ও আমেরিকানদের মধ্যে বার্তা পাঠাতে উপসাগরীয় আরব মিত্রদের ব্যবহার করছে আমেরিকা। ইরানের সঙ্গে সৌদি আরব যোগাযোগ বজায় রাখছে। এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের মাঝে একটি বোঝাপড়া রয়েছে।
কীভাবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এই সংকট সামাল দিচ্ছে তা জানতে দেশ দুটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে রয়টার্স।
উপসাগরীয় সূত্র ও বিশ্লেষকরা বলছেন, সবচেয়ে বিপজ্জনক মুহূর্ত কেটে গেছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর সরকারপন্থি গাল্ফ রিসার্চ সেন্টারের প্রধান আব্দুল আজিজ আল-সাগর বলেছেন, ইরানিরা তাদের প্রতিশোধ নিয়েছে। উত্তেজনা বৃদ্ধির সময় পার হয়ে গেছে। এখন ইসরায়েলের তরফ থেকেও আর কোনো উসকানি চাইছে না যুক্তরাষ্ট্র।
মন্তব্য করুন