মধ্যপ্রাচ্যে নিজের প্রভাব বাড়াতে একের পর এক সামরিক ক্ষমতার প্রদর্শনী করে যাচ্ছে ইরান। বিশেষ করে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর ইরানের সমর উন্মাদনা যেন আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র ছায়াগোষ্ঠী দিয়ে ঘিরে রেখেছে ইসরায়েল ও মার্কিন ঘাঁটিগুলো। এর মধ্যেই এবার ইসরায়েলি বিমান ঘাঁটিতে হামলার শক্তিশালী সক্ষমতা দেখাল দেশটির এলিট ফোর্স ইসলামি বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী তথা আইআরজিসি।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় সোমবার আইআরজিসির নৌ-ইউনিট তাদের নিজস্ব যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মাধ্যমে একটি মহড়া পরিচালনা করে। এতে কৃত্তিমভাবে তৈরি করা ইসরায়েলের পালমাচিম বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ করার অনুশীলন করা হয়। দুটি ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলার অনুশীলন করে আইআরজিসির নৌ-সেনারা। এ মহড়ায় আইআরজিসির বিমান ইউনিটও অংশ নেয় বলে জানায় ইরানের গণমাধ্যমগুলো।
গত মাসে এই বিমানঘাঁটিতে দেওয়া এক বক্তব্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, ইসরায়েলের জন্য নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করলে ইরান আক্রমণ করতে কোনো দ্বিধা করবে না তেল আবিব। আইআরজিসি পরিচালিত মহড়ায় ইসরায়েলি বিমানঘাঁটিতে থাকা এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের হ্যাঙ্গারগুলোকে এমাদ এবং কদর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত সংস্করণ দ্বারা আক্রমণ করা হয়। মহড়ায় নির্ধারিত পালমাচিম বিমানঘাঁটিটি তেল আবিবের ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত। এটি মূলত এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী।
আইআরজিসি কমান্ডার-ইন-চিফ হোসেন সালামি জানান, তার বাহিনী প্রথমবারের মতো যুদ্ধজাহাজ থেকে দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে সফল হয়েছে। এ সক্ষমতা ইরানের নৌ-প্রভাব ও শক্তির পরিধিকে বাড়িয়ে তোলে। ইরানের জন্য নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করতে চায় এমন শক্তিগুলোর জন্য এখন থেকে সমুদ্রে কোনো নিরাপদ স্থান থাকবে না।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, শহিদ মাহদাভি থেকে দুটি দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হচ্ছে। এটি মূলত একটি বহুমুখী যুদ্ধজাহাজ, যা বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও রাডার সিস্টেম বহন করতে সক্ষম। অন্তত ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ওমান সাগরের কোনো স্থানে থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল এবং মধ্য ইরানের একটি মরুভূমিতে তৈরি করা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে।
মহড়ায় আইআরজিসি স্পিড বোট, ক্যাটামারান এবং স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা সজ্জিত সাবমেরিন প্রদর্শন করা হয়। এতে ব্যবহৃত কায়েম ক্ষেপণাস্ত্রের আধুনিক ধরনটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্রের ইরানি সমতুল্য বলে মনে করা হয়। এ সময় আইআরজিসি সম্প্রতি উন্মোচিত দুটি ক্যাটামারান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে, যা অ্যান্টিশিপ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম বলে জানা যায়।
মন্তব্য করুন