ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। যুদ্ধবিরতি কখন থেকে কার্যকর হবে তা জানানো না হলেও যুদ্ধবিরতি শেষে পুনরায় লড়াই শুরু করার কথা জানিয়ে রেখেছে দু’পক্ষই। বুধবার (২২ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।
চুক্তি অনুযায়ী, হামাসের হাতে জিম্মি ৫০ বন্দির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ১৫০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। এ ছাড়া গাজা উপত্যকায় চার দিন সব ধরনের সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখবে ইসরায়েল। পাশাপাশি ২৩ লাখ মানুষের এই অঞ্চলে মানবিক, চিকিৎসা সহায়তা ও জ্বালানি নিয়ে শত শত ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেবে ইসরায়েলি বাহিনী।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে হামাস ও ইসরায়েল—দুপক্ষই আলাদা বিবৃতি দিয়েছে। তাদের বিবৃতি নিচে তুলে ধরা হলো :
হামাস
বিবৃতিতে হামাস বলেছে, অনেক দিন ধরে জটিল ও কঠিন আলোচনার পর আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাহায্যে ঘোষণা করছি যে, কাতার ও মিসরের অবিরাম ও প্রশংসিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা চার দিনের একটি মানবিক যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছি।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতি দেবে। গাজা উপত্যকার সব এলাকায় দখলদার সেনাবাহিনীর সব সামরিক কর্মকাণ্ড ও সামরিক যান চলাচল বন্ধ থাকবে। গাজা উপত্যকার সব এলাকায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও জ্বালানি নিয়ে শত শত ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। ইসরায়েলি ৫০ জন নারী ও শিশু বন্দির বিনিময়ে আমাদের ১৫০ জন নারী ও শিশুকে ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতির চার দিন দক্ষিণ গাজায় বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে। এ সময় প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা উত্তর গাজায় বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে। এ সময় গাজায় কোনো হামলা বা কাউকে আটক না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসরায়েল। উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণ গাজায় স্বাধীনভাবে মানুষের চলাচল নিশ্চিত করবে তারা।
হামাস আরও বলেছে, আমরা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করলেও আমরা নিশ্চিত করছি যে, আমাদের হাত বন্দুকের ট্রিগারে থাকবে। আমাদের বিজয়ী ব্রিগেড আমাদের জনগণের নিরাপত্তা এবং দখলদার ইসরায়েল ও এর আগ্রাসন রুখতে তৎপর থাকবে।
ইসরায়েল
বিবৃতিতে ইসরায়েল সরকার জানিয়েছে, গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি সব বন্দিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তারা বাধ্য। আজ রাতে সরকার এই লক্ষ্য অর্জনের প্রথম পর্যায়ের রূপরেখা অনুমোদন দিয়েছে। রূপরেখা অনুযায়ী, অন্তত ৫০ জন নারী ও শিশুকে চার দিনের মধ্যে মুক্তি দেওয়া হবে। এই সময়ে দুপক্ষের লড়াইয়ে বিরতি দেওয়া হবে। এই চার দিনের পর এক দিন করে যুদ্ধবিরতির সময় বাড়ালে আরও ১০ জন করে জিম্মি মুক্তি দেবে।
তবে ইসরায়েলের সরকার, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা সম্পর্কিত সংস্থা সব জিম্মিদের মুক্তি, হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল এবং গাজা থেকে নতুন হুমকি যাতে না আসে তা নিশ্চিত করার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
এদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদনের পর বুধবার এক বক্তব্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, আমরা একটি যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি এবং যতদিন আমাদের লক্ষ্য পূরণ না হয়, ততদিন এই যুদ্ধ চলবে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলি হত্যার পাশাপাশি দুই শতাধিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। এরপর হামাসকে নিশ্চিহ্নের নাম করে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি হামলায় এরই মধ্যে ১৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
মন্তব্য করুন