ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ১৫ জন জরুরি স্বাস্থ্যকর্মী মৃত্যুর ঘটনায় ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ কোনো প্রমাণ মেলেনি বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। হত্যার অভিযোগে শাস্তি কার্যকরের মতো তথ্য-প্রমাণ তাদের তদন্তে পাওয়া যায়নি বলে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
রোববার (২০ এপ্রিল) প্রকাশিত আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই তদন্ত ইসরায়েল সেনাবাহিনীর নিজস্ব উদ্যোগে সম্পন্ন হয়েছে। ইসরায়েলের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে আরও প্রতিক্রিয়া এবং সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ধরনের অভিযোগ আমাদের সেনাদের বিরুদ্ধে রক্তপাতের অপবাদ এবং মিথ্যা প্রচারণা। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে একটি অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের ট্রাক এবং জাতিসংঘের পতাকা লাগানো একটি গাড়ি স্পষ্টভাবে চিহ্নিত ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের ও ভিডিও ফুটেজেও দেখা যায়, সেবাকর্মীরা প্রতিফলিত ইউনিফর্ম পরে স্পষ্টভাবে পরিচিত অবস্থায় ছিলেন।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, কনভয়টি ‘সন্দেহজনকভাবে’ অগ্রসর হচ্ছিল এবং বাহিনীটি তখন উচ্চ সতর্কতা অবস্থায় ছিল। তারা জানায়, সম্ভাব্য হুমকি প্রতিহত করতেই গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে অভিযানে পেশাগত ব্যর্থতা, আদেশ লঙ্ঘন এবং রিপোর্টিংয়ে অস্পষ্টতা চিহ্নিত করা হয়েছে বলে সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে। ফলে গোলানি রিকনাইস্যান্স ব্যাটালিয়নের ডেপুটি কমান্ডারকে বরখাস্ত এবং ১৪তম ব্রিগেডের কমান্ডারকে তিরস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর গুলি চালায় সেনারা, যা পূর্বে দেওয়া ইসরায়েলের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সেনাবাহিনী দাবি করেছে, নিহতদের মধ্যে ছয়জন হামাসের সদস্য ছিল—যদিও এই দাবির পক্ষে কোনো স্বতন্ত্র প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
রাফাহর কাছে চিকিৎসাকর্মীদের মৃতদেহ এবং তাদের ব্যবহৃত যানবাহন মাটি চাপা অবস্থায় পাওয়া যায়। ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, বেসামরিক লোকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই মৃতদেহগুলো সরে ফেলতে হয়েছিল।
তদন্তের শেষাংশে ইসরায়েলি বাহিনী দুঃখ প্রকাশ করে জানায়, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্যই এই তদন্ত পরিচালিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ গাজায় একটি অ্যাম্বুলেন্স বহরে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ১৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস এক ভিডিও প্রকাশ করে। তখন ২৩ মার্চের ঘটনায় ইসরায়েল দাবি করেছিল, অ্যাম্বুলেন্সটি হামাস যোদ্ধাদের পরিবহন করছিল এবং হেডলাইট বন্ধ ছিল।
তবে ভিডিওতে দেখা যায়, গাড়িগুলোর জরুরি আলো স্পষ্টভাবে জ্বলছিল। ভিডিওটি এক চিকিৎসকের মোবাইল ফোনে ধারণ করা, যা জাতিসংঘের এক কূটনীতিকের মাধ্যমে টাইমসের হাতে আসে।
ভিডিও ও স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে উঠে আসে, গুলি বর্ষণের পর ইসরায়েলি বাহিনী বুলডোজার দিয়ে লাশ ও গাড়িগুলো মাটিচাপা দেয়। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানান, গণকবর থেকে ১৫ স্বাস্থ্যকর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের প্রধান জানান, ইসরায়েল আট দিন ধরে মৃতদের অবস্থান গোপন রেখেছিল। তিনি এটিকে যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে আখ্যা দেন।
মন্তব্য করুন