মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম স্পর্শকাতর ধর্মীয় স্থাপনা আল-আকসা মসজিদকে ঘিরে আবারও উত্তেজনা বাড়ছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এক হাজারেরও বেশি ইহুদি পুণ্যার্থীকে নজিরবিহীনভাবে মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে।
এর মাধ্যমে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ১৮০ জন ইহুদিকে আল-আকসা প্রাঙ্গণে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা পূর্বের নীতির তুলনায় বড় রকমের পরিবর্তন। এর আগে ইসরায়েল একসঙ্গে ৩০ জনের বেশি ইহুদিকে প্রবেশ করতে দিত না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ শুধু স্থিতাবস্থা ভাঙাই নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি এক পরিকল্পনার আভাসও দিতে পারে।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর পাহারায় ইহুদি পুণ্যার্থীদের আল-আকসা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করানো হয়। ইহুদিরা এ স্থানকে ‘টেম্পল মাউন্ট’ নামে চেনে। ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্র স্থান হিসেবে স্বীকৃত এই মসজিদ ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েলের দখলে রয়েছে, যদিও আন্তর্জাতিকভাবে এটি একটি দখলকৃত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত।
আল-আকসা মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা ইসলামিক ওয়াক্ফ জানায়, শুধু বুধবারই ১,২০০ ইসরায়েলি ইহুদি মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছেন। ‘পাসওভার’ উপলক্ষে গত সপ্তাহ থেকেই এই প্রবেশের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে। ওয়াক্ফের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক দিনে ৪ হাজারেরও বেশি ইহুদি ধর্মীয় রীতিনীতি লঙ্ঘন করে এই পবিত্র স্থানে প্রবেশ করেছেন।
ইসরায়েলি পুলিশের ভাষ্য, তারা পূর্বনির্ধারিত নিয়ম মেনেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করে টেম্পল মাউন্টে দর্শনার্থীদের প্রবেশে সহায়তা করেছে। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মুসলিমদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, আর ইহুদি পুণ্যার্থীরা উল্লাস করছে জেরুজালেমের ওল্ড সিটির লায়ন্স গেট এলাকায়।
ইসলামিক ওয়াক্ফের আন্তর্জাতিকবিষয়ক পরিচালক আউনি বাজবাজ এই ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন ও ভীতিকর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ২০০৩ সালে যেখানে দিনে সর্বোচ্চ ২৫৮ জন ইহুদি প্রবেশ করতেন, এখন সেখানে এক দিনে হাজারো ইহুদি প্রবেশ করছে। এমন পরিস্থিতি আগে কখনও দেখা যায়নি।
উগ্র ইহুদি বসতি স্থাপনকারী গোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন ধরেই আল-আকসা চত্বরে মন্দির নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। এমনকি কেউ কেউ বলছে, মন্দির নির্মাণ করতে গেলে আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস করতে হবে। টেম্পল মাউন্ট নামক একটি উগ্রপন্থী ইহুদি সংগঠন জানিয়েছে, পাসওভারের প্রথম তিন দিনে প্রায় তিন হাজার পুণ্যার্থী মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছে।
ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বহুবার প্রকাশ্যে দাবি করেছেন, ইহুদি পূণ্যার্থীদের মসজিদ চত্বরে প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া হোক। তিনি নিজেও একাধিকবার আল-আকসা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছেন।
অন্যদিকে ইসলামী নেতারা সতর্ক করছেন, পরিস্থিতি যদি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে আল-আকসার ভাগাভাগি একসময় বাস্তবে রূপ নিতে পারে—যেমনটা হয়েছে হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদের ক্ষেত্রে, যেখানে একাংশ মসজিদ ও অন্য অংশ সিনাগগে পরিণত হয়েছে।
আউনি বাজবাজ বলেন, এখন যা ঘটছে, তা কেবল ধর্মীয় উদ্দেশ্য নয়, বরং উসকানিমূলক। এটি এক ধরনের বর্ণবাদ, যা বাস্তবতা হয়ে উঠছে। গাজার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রবণতা আরও তীব্র হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ নিছক ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশ্ন নয়—বরং এটি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বড় কৌশলের অংশ হতে পারে।
সূত্র : মিডল ইস্ট আই
মন্তব্য করুন