পরমাণু ইস্যুতে তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে দ্বিতীয় দফার আলোচনা চলছে। ঠিক এই সময়েই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাতে প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিয়েছে ইসরায়েল। দেশটি মনে করছে, ইরানকে পরমাণু অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে হলে প্রয়োজনে সামরিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, ইরানের সঙ্গে যেকোনো ধরনের আলোচনায় তাদের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস করা জরুরি।
ইসরায়েল মনে করে, শুধু আলোচনা নয়, প্রয়োজনে সীমিত সামরিক হামলার মাধ্যমে ইরানের পরমাণু সক্ষমতাকে পেছনে ঠেলে দেওয়া যেতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইসরায়েলি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র আপাতত ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলায় অংশ নিতে আগ্রহী নয়। তবু ইসরায়েল এককভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর বিষয়ে আগ্রহী থেকে যাচ্ছে।
সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, গত কয়েক মাসে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বেশ কয়েকটি হামলার বিকল্প পরিকল্পনা তুলে ধরেছে। এসব পরিকল্পনার মধ্যে কিছুতে হামলার সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করা হয়েছে বসন্তের শেষ বা গ্রীষ্মকাল হিসেবে। হামলার ধরনও ভিন্ন হতে পারে—বিমান হামলার পাশাপাশি হতে পারে বিশেষ বাহিনীর (কমান্ডো) অভিযান।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব হামলার লক্ষ্য হবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কয়েক মাস, এমনকি এক বছর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া। তবে এমন পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কেও টানাপড়েন সৃষ্টি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চলতি মাসের শুরুতে হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ওয়াশিংটন তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনাকে প্রাধান্য দিতে চায়। স্বল্পমেয়াদি কোনো হামলা চালানোর ব্যাপারে তারা আগ্রহী নয়।
তবু ইসরায়েলের ধারণা, একটি সীমিত পরিসরের সামরিক অভিযান যুক্তরাষ্ট্রের আংশিক সহায়তায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতে পারে। তবে এ ধরনের হামলার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব স্পষ্ট না হওয়ায় ইসরায়েল এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এ বিষয়ে রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ইরানের ওপর হামলার সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত নয়। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অন্যদিকে এক ইরানি নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, আমাদের নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে—ইসরায়েল আমাদের পরমাণু স্থাপনায় বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে। তেহরান এই পরিকল্পনার বিষয়ে অবগত এবং যেকোনো হামলার বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃঢ় জবাব দেওয়া হবে।
রয়টার্স আরও জানায়, এর আগেও গত বছর ইসরায়েল তাদের সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনার কিছু অংশ বাইডেন প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করেছিল। সেই সময় নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রকে বিমান হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে বাইডেন প্রশাসন তা প্রত্যাখ্যান করে।
পরিস্থিতির এমন উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে ইরান-মার্কিন আলোচনা কতটা অগ্রগতি অর্জন করবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে। একইসঙ্গে নজর থাকবে ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকেও।
মন্তব্য করুন