মার্কিন কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও হুমকির মধ্যেই পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দ্বিতীয় দফায় আলোচনায় বসছে ইরান।
রোমে এই পরোক্ষ বৈঠকে ইরানের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ। আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে ওমান।
ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আরাকচি আলোচনার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে ইতোমধ্যেই রোমে পৌঁছেছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) মস্কোতে এক বক্তব্যে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি বাস্তববাদী অবস্থান নেয়, তাহলে পরমাণু ইস্যুতে একটি চুক্তি সম্ভব। খবর ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আমি শুধু চাই ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র না পায়। তাদের এটা থাকতে পারবে না। আমি চাই ইরান হোক চমৎকার, সমৃদ্ধ এবং দুর্দান্ত।
রোমে হতে যাওয়া বৈঠকের আগে এক সপ্তাহ আগেই ওমানের মাসকাটে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম দফার আলোচনা। উভয় পক্ষ তা ‘গঠনমূলক’ বলে উল্লেখ করলেও, চুক্তি নিয়ে দ্রুত আশা না করার ইঙ্গিত দিয়েছে তেহরান।
উল্লেখ্য, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি মন্তব্য করেছেন, আমি অত্যধিক আশাবাদী নই, আবার নিরাশও নই।
২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে সরে যায় ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে। এরপরই ইরানের ওপর আবারো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন। ২০২৫ সালে হোয়াইট হাউজে ফিরে এসে ট্রাম্প পুনরায় ‘সর্বোচ্চ চাপ’ কৌশল গ্রহণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র চায়, ইরান যেন উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করে। ওয়াশিংটনের দাবি, এটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহার হতে পারে।
তবে তেহরান স্পষ্ট জানিয়েছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। তারা কিছু সীমাবদ্ধতা মানতে রাজি, যদি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র আগামিতে আর চুক্তি থেকে সরে না আসে—এই নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
একজন জ্যেষ্ঠ ইরানি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সেন্ট্রিফিউজ অপসারণ করবে না, পুরোপুরি সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করবে না এবং মজুদের মাত্রা ২০১৫ সালের তুলনায় কমাবে না। এছাড়া ক্ষেপণাস্ত্রসহ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিয়েও কোনো আলোচনা করতে রাজি নয় তেহরান।
উইটকফ ও আরাকচির মধ্যে মাসকাটে সংক্ষিপ্ত কথা হলেও, ২০১৫ সালের পর এই দুই দেশের মধ্যে সরাসরি কোনো আলোচনা হয়নি। রোমের আলোচনাও হবে ওমানি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে, অর্থাৎ পরোক্ষ।
রাশিয়া, যেটি ২০১৫ সালের চুক্তিতে অংশীদার ছিল, জানিয়েছে—তারা আলোচনায় সহায়তা ও মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই বলছে তারা কূটনীতির পথেই এগোতে চায়। তবে দুই দেশের দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস ও পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কারণে আলোচনার ফল কতটা ইতিবাচক হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
মন্তব্য করুন