ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ গড়িয়েছে ১৮ মাসে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ভয়ানক হামলা এবং গাজার বিভিন্ন এলাকা দখল করে যাচ্ছে ইসরায়েলের সেনারা।
এই প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের হাতে আটক এক ইসরায়েলি সেনার আবেগঘন ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে তিনি মুক্তির আকুতি জানাচ্ছেন।
স্থানীয় সময় শনিবার (১২ এপ্রিল) ভিডিওটি প্রকাশ করে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওটি তারিখবিহীন হলেও তাতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি নিজেকে এডান অ্যালেক্সান্ডার হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। তিনি একজন মার্কিন-ইসরায়েলি নাগরিক এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সদস্য বলে দাবি করেন।
ভিডিওবার্তায় অ্যালেক্সান্ডার বলেন, গাজায় আমাকে ৫৫১ দিন ধরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি আরও জানতে চান, কেন এখনো তার বন্দিত্বের অবসান ঘটেনি। সংশ্লিষ্টদের প্রতি আকুতি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাকে ছাড়িয়ে নিন।
ভিডিওটি প্রকাশিত হয়েছে ইহুদি ধর্মীয় উৎসব পাসওভার শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে। ভিডিওটি দেখার পর ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে তার পরিবার। তারা এক বিবৃতিতে জানায়, অ্যালেক্সান্ডারসহ গাজায় আটক আরও ৫৮ জিম্মি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত মুক্তির কোনো উৎসব আমাদের জন্য অর্থবহ নয়।
প্রসঙ্গত, পাসওভার উৎসব মূলত ইহুদি ধর্মমতে দাসত্ব থেকে মুক্তি ও স্বাধীনতা উদযাপনের প্রতীক। ঠিক এমন এক উপলক্ষে জিম্মি এক ব্যক্তির ভিডিও প্রকাশকে কৌশলী বার্তা হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।
উল্লেখ্য, এর আগেও হামাস বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে জিম্মিরা মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এসব ভিডিওকে হামাসের প্রচার কৌশল বা ‘প্রোপাগান্ডা’ বলে উল্লেখ করে আসছেন। তাদের দাবি, এসব ভিডিওর উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারকে জনমতের চাপে ফেলানো।
চলতি সংঘাতে গত বছর ১৯ জানুয়ারি একবার যুদ্ধবিরতির সময় হামাস ৩৮ জিম্মিকে মুক্তি দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ না করে কেবল যুদ্ধবিরতির সময় বাড়ানোর প্রস্তাবে রাজি হয়নি হামাস। এতে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গাজা পরিস্থিতি, শুরু হয় নতুন করে ইসরায়েলের স্থল ও বিমান হামলা।
ইসরায়েলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজা পুরোপুরি অসামরিকীকরণ এবং সব জিম্মির মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে হামাস জানিয়েছে, যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি ছাড়া কোনো জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে না, অস্ত্র ত্যাগের প্রশ্নও উঠবে না।
গাজা সংকটের সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সমঝোতার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর সমাধান আসেনি।
মন্তব্য করুন