কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৭ এএম
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

মা-ছেলের জন্ম একই তারিখে, মরতে হলো একই দিনে

স্বজনহারাদের আর্তনাদ। ছবি : সংগৃহীত
স্বজনহারাদের আর্তনাদ। ছবি : সংগৃহীত

গাজার এক তরুণী। নির্মল পৃথিবীতে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতেন। শান্ত ও নিরাপদ কোনো জনপদের এক নারীর মতোই আল্লাহর কাছে চাইতেন ‘এক সোনালি সংসার, স্বামী-সন্তান নিয়ে নির্বিবাদ এক জীবন’। তখন গাজার পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত ও স্থিতিশীল। ইসরায়েলের আগ্রাসনে চলছে ভাটা। এভাবে বুঝি কাটবে অন্তত আরও এক দশক। হয়তো বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপে অদূর ভবিষ্যতে রক্তপাতহীন স্বাধীনতাও আসতে চলেছে। এমন স্থির গাজায় তাইতো নিজের দেহে ধারণ করেন আরেক দেহ।

সব কিছু স্বাভাবিকই চলছিল। স্বামী-স্বজনের ভালোবাসায় খুব একটা অসুবিধা হচ্ছিল না সেই তরুণীর। কিন্তু হঠাৎ যেন নরক থেকে উদয় হলো ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। ইসরায়েলে হামাস হামলা করে বসল। শুরু হয়ে গেল ভয়াবহ যুদ্ধ। মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সেই যুদ্ধ রূপ নিল একতরফা গণহত্যায়।

সেই তরুণী ভেবেছিলেন, নরকের দিন এক দিন শেষ হবেই। তাইতো বোমার আঘাতে ধসে পড়া ভবনের পাদদেশে অনাহারে থেকেও আগের মতো স্থির গাজায় সন্তান জন্মদানের স্বপ্ন দেখতেন।

দেখতে দেখতে ১০ মাস ১০ দিন কাটল। বোমার শব্দ থামল না। নরকের দিন শেষ হলো না। ঘনিয়ে এলো ২০ ফেব্রুয়ারি; ওই তরুণীর জন্ম দিন। একই দিনে জন্ম দিলেন ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান। একদিকে পড়ছে বোমা অন্যদিকে চলছে ওই তরুণীর সংসার। শত কষ্টেও স্বামীর সঙ্গে তিনি খুশি। দেহে আবারও এলো আরেক প্রাণ। ফের গাজা শান্ত হওয়ার আশা এবং সেই গাজায় অনাগত দ্বিতীয় সন্তান ভূমিষ্টের স্বপ্নে বিভর হলেন তরুণী।

মিডল ইস্ট আই ওই তরুণীর স্বামী আলা আবু হিলালের একটি ভিডিও ধারণ করেছে। তার স্ত্রী ও প্রথম সন্তান তখন অতীত। দ্বিতীয় সন্তান বলে কিছু রইল না; গর্ভেই শুরু, গর্ভেই শেষ। পাগলপ্রায় আবু হিলালের জবানে স্ত্রীর নাম উচ্চারিত হয়নি; ‘প্রিয়তমা স্ত্রী’ই যেন তার নাম। মিডল ইস্ট আই-ও ওই তরুণীর প্রকৃত নাম জানতে চায়নি।

আলা আবু হিলাল তার শিশুপুত্র মোহাম্মদের মৃতদেহ কোলে তুলে বলতে থাকেন, আমি সবেমাত্র সংসার শুরু করেছি। কেবল আমার একটি পরিবার হতে চলেছে। এটি আমার প্রথম সন্তান, সে আমার পুরো পৃথিবী, আমার জীবন।

কান্নায় বুক ভাসিয়ে হিলাল বলতে থাকেন, ‘আমার স্ত্রীর জন্ম ২০ ফেব্রুয়ারি এবং আমার ছেলের জন্মও ২০ ফেব্রুয়ারি। আমার স্ত্রী শহীদ হন ১৯ মার্চ এবং আমার ছেলেও শহীদ হন ১৯ মার্চ। (২০২৫ সালের ১৯ মার্চ। এর একদিন আগে ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর ইসরায়েল নতুন করে পুরোদমে হামলা শুরু করে)।

আবু হিলাল আশা করেছিলেন, গাজার একটি নিরাপদ এলাকায় তার স্ত্রী এবং ছেলেকে রেখে গেলে তারা রক্ষা পাবে। তাই এক শরণার্থী শিবিরে তাদের রেখে নিজে অন্য এলাকায় সরে যান।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি একটি ফোন কল পান। যেখানে তাকে জানানো হয়, তারা যে তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিল সেখানে বিমান হামলা হয়েছে।

তার ছেলের বয়স ছিল মাত্র ১৩ মাস। স্ত্রী তাদের দ্বিতীয় সন্তানের জন্য গর্ভবতী ছিলেন।

খানিক সময় চোখের জল আটকে রেখে আবু হিলাল বারবার তার ছেলের কপালে চুমু খেতে খেতে কথা বলতে লাগলেন, ‘সে খুব স্নেহশীল এবং বুদ্ধিমান সন্তান ছিল। আমি সবেমাত্র একটি পরিবার শুরু করেছি। আমি আমার স্ত্রীর সাথে একটি জীবন গড়তে চেয়েছিলাম, সন্তান ধারণ করতে চেয়েছিলাম। এমনকি যুদ্ধের সময়ও আমরা একটি পরিবার শুরু করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এমন কি হওয়ার কথা ছিল?’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র / এই বাঘ-বন্দি খেলায় জিতবে কে?

অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের কাছাকাছি গিয়ে ভিলার স্বপ্নভঙ্গ

ডর্টমুন্ডের কাছে হারের পরও সেমিতে বার্সা

দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে সিলেটে ছাত্রলীগ কর্মী নিহত

হাসপাতালে সেবা বন্ধে জনদুর্ভোগ, পরে কর্মবিরতি প্রত্যাহার

ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৪ কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ

কুয়েটে ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারাদেশ পুনর্বিবেচনার আহ্বান ছাত্রদলের

ঢাবিতে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

হ্যাটট্রিক জয়ে বিশ্বকাপের আরও কাছে বাংলাদেশ নারী দল

‘লন্ডনে তারেক রহমানের বাসায় গেলেন জামায়াত আমির’

১০

‘১৫ বছর দেশের মানুষ কোনো উৎসব পালন করতে পারেনি’

১১

ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানাল এনসিপি

১২

চসিক মেয়রের সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের মতবিনিময়

১৩

আগামী অর্থবছরের বাজেট কত হবে, বৈঠকে নির্ধারণ

১৪

পুকুরে ডুবে প্রাণ গেল ভাই-বোনের

১৫

পঞ্চম শিরোপার লক্ষ্য বাংলাদেশের

১৬

ঠাকুরগাঁওয়ে চীনা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবিতে ৫ দফা কর্মসূচি

১৭

বই দেখে পরীক্ষা দিল এসএসসি পরীক্ষার্থীরা, ভিডিও ভাইরাল

১৮

স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার বিরুদ্ধে এনসিপি কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ

১৯

ফোন না ধরার অভিযোগের বক্তব্য নিতে ফোন করলেও ধরেননি ঢাবি ভিসি

২০
X