মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। তবে দেশটি জানিয়েছে, তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় পরোক্ষভাবে আলোচনায় বসতে তারা আগ্রহী।
একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদেশগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান—ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় সহায়তা করলে তাদেরও পরিণতি ভোগ করতে হবে।
রোববার (৬ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়, ইরানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি সংলাপের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে তেহরান।
তবে ওমানের মাধ্যমে পরোক্ষ আলোচনা চায় তারা, কারণ ওমান দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে বার্তাবাহকের ভূমিকা পালন করে আসছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, পরোক্ষ সংলাপ ওয়াশিংটনের সদিচ্ছা যাচাইয়ের একটি উপায় হতে পারে। মার্কিন বার্তা ইতিবাচক হলে আলোচনা দ্রুত শুরু হতে পারে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এই পথ সহজ হবে না।
ইরাক, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও তুরস্কে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিকে ঘিরে ইরান কড়া বার্তা দিয়েছে। কর্মকর্তার ভাষায়, ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় এদের ভূখণ্ড বা আকাশসীমা ব্যবহার হলে, তা শত্রুতা বলে বিবেচিত হবে এবং এর পরিণতি গুরুতর হবে।
তিনি আরও জানান, সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি এরই মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ সতর্কতায়’ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
গাজা ও লেবাননে চলমান যুদ্ধ, ইয়েমেনের সংঘাত, সিরিয়ায় উত্তেজনা এবং ইসরায়েল-ইরান গোলাবিনিময়ের মধ্যে এই হুমকি-আলোচনার মিশ্র বার্তা এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পুরো অঞ্চল বিশ্বের জ্বালানি সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং যেকোনো বড় সংঘাত বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে ইরানের মিত্র রাশিয়া স্পষ্ট জানিয়েছে, তেহরানের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক হুমকি ‘অগ্রহণযোগ্য’। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
তবে ইরান রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করেছে, জানিয়ে বলেছে—চূড়ান্ত পরিস্থিতি নির্ভর করবে ট্রাম্প-পুতিন সম্পর্কের গতিপ্রবাহের ওপর।
অপরদিকে ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সংঘাত নয়, একটি নতুন চুক্তি চান। খামেনির কাছে একটি প্রস্তাবনামূলক চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি। তেহরান বলেছে, আলোচনা হতে পারে যদি তা পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ‘বাস্তব উদ্বেগ’ নিরসনে সহায়ক হয়। তবে হুমকির মুখে বসা যাবে না এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনা-সীমার বাইরে থাকবে।
জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থা জানিয়েছে, ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যা অস্ত্র-গ্রেড ইউরেনিয়ামের (৯০%) কাছাকাছি। পশ্চিমা দেশগুলোর দাবি—এত উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধকরণ শুধুই সামরিক উদ্দেশ্যে হয়ে থাকতে পারে। যদিও ইরান দাবি করছে, এটি শান্তিপূর্ণ প্রয়োজনে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে মার্কিন ড্রোন হামলায় কাসেম সোলেইমানি নিহত হলে ইরান পাল্টা জবাব দিয়েছিল ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে। এবারও পরিস্থিতি সেদিকেই গড়াচ্ছে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
মন্তব্য করুন