সম্প্রতি গাজায় ১৫ জরুরি সহায়তাকর্মীকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনারা। হত্যার পর লাশগুলো একসঙ্গে মাটি চাপা দেয় তারা। প্রথমে এই হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বীকার করে ইসরায়েল। তবে গতকাল (৫ এপ্রিল) এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে অবশেষে ভুল স্বীকার করেছে তেলআবিব।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সহায়তাকর্মীদের হত্যার ওই ঘটনায় ভুল স্বীকার করেছে ইসরায়েল। গত ২৩ মার্চ দক্ষিণ গাজায় এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটায় ইসরায়েলি সেনারা। হত্যার লোমহর্ষক ভিডিওটি প্রকাশ পেয়েছে শনিবার।
ঘটনার দিন রাফার কাছে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (পিআরসিএস) একটি অ্যাম্বুলেন্স, জাতিসংঘের একটি গাড়ি এবং গাজার সিভিল ডিফেন্সের একটি অগ্নিনির্বাপক ট্রাকের বহরের ওপর ইসরাইলের সৈন্যরা গুলি চালায়। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, সহায়তাকর্মীদের গাড়িবহরে অতর্কিতভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে একাধিক সশস্ত্র ইসরায়েলি সেনা।
ইসরায়েলি বাহিনী শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, নিহতদের লাশ একসঙ্গে মাটি চাপা দেয় তারা। এক সপ্তাহ পর সন্ধান পাওয়া যায় সেই গণকবরের। ওই সময় সহায়তাকর্মী রেফাত রাদওয়ানের মোবাইল ফোনও পাওয়া যায়, যেখানে ঘটনার ফুটেজ ছিল। ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার আগে তিনি ওই ভিডিও ধারণ করেন।
ভিডিও প্রকাশের পর ইসরায়েল প্রাথমিকভাবে দাবি করে, গাড়ি বহরটি হেডলাইট বা ফ্ল্যাশিং লাইট ছাড়াই অন্ধকারের মধ্যে এসেছিল, যা তাদের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছিল। এ ছাড়া যানবাহন চলাচলে আগে থেকেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করা হয়নি।
তবে নিহত সহায়তাকর্মীর ধারণ করা মোবাইল ফোনের ফুটেজে দেখা গেছে, আহতদের সাহায্য করার জন্য ডাকাডাকির সময় যানবাহনগুলোতে আলো জ্বালানো ছিল। এমনকি প্যারামেডিক কর্মীরা রিফ্লেকটিভ হাই-ভিউজ ইউনিফর্ম পরে ছিল, অর্থাৎ অনেক দূর থেকে প্রতিফলিত হয় এমন পোশাক পরে ছিল।
নিউইয়র্ক টাইমসের শেয়ার করা ভিডিওটিতে দেখা যায়, গাড়িগুলো রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে ছিল, তারপর ভোর হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে কোনো সতর্কতা ছাড়াই গুলি ছোড়া শুরু হয়। ফুটেজটি পাঁচ মিনিটের বেশি চলতে থাকে এবং আহত কর্মী রাদওয়ান নামে একজন প্যারামেডিককে তার শেষ প্রার্থনা করতে শোনা গেছে।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) জোর দিয়ে বলেছে, অন্তত ছয় চিকিৎসক হামাসের সঙ্গে যুক্ত ছিল। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি তারা। তবে আইডিএফ স্বীকার করেছে যে, তাদের সৈন্যরা যখন গুলি চালায় তখন সহায়তাকর্মীরা নিরস্ত্র ছিল।
ইসরায়েল দাবি করছে, যখন অ্যাম্বুলেন্সগুলো মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে এলাকার কাছে পৌঁছায়, তখন বিমান নজরদারি মনিটর থেকে স্থলে থাকা সৈন্যদের সতর্ক করা হয় যে, একটি গাড়ি বহর ‘সন্দেহজনকভাবে এগিয়ে আসছে’। অ্যাম্বুলেন্সগুলো হামাসের গাড়ির পাশে থামায়। সৈন্যরা মনে করেছিল যে, তারা হুমকির সম্মুখীন এবং এজন্য তারা গুলি চালিয়েছিল।
নতুন দাবির পাশাপাশি ইসরায়েল এখন তাদের আগের দাবি ভুল বলে স্বীকার করেছে। রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যান্য অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ঘটনায় একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে আইডিএফ বলছে, তারা এ ঘটনার ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত’ করবে।
মন্তব্য করুন