ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দুই জিম্মি এলকানা বোহবট (৩৫) এবং যোশেফ-হাইম ওহানা (২৪)-এর একটি ভিডিও সম্প্রতি প্রকাশ করেছে হামাস।
এই দুই যুবককে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যালে অপহরণ করা হয়েছিল। হামাসের প্রকাশিত ভিডিওটি স্থানীয় সময় সোমবার (২৪ মার্চ) ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য জেরুজালেম পোস্ট-এ প্রচারিত হয়।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, বোহবট এবং ওহানা মেঝেতে বসে আছেন, তাদের চেহারা ফ্যাকাশে এবং অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। বোহবট ভিডিওতে বলেন, গতকাল পর্যন্ত, আমার একটি নাম, একটি পরিচয়পত্র এবং আশা ছিল। আজ, আমি কেবল একটি সংখ্যা। তার কণ্ঠে হতাশা এবং অপমৃত্যুর অনুভূতি স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে।
ওহানা ভিডিওতে ব্যাখ্যা করেন যে, হামাস তাদেরকে ভিডিওটি তৈরি করতে বলেছিল। তিনি জানান, যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে তারা যে দুঃসহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন, তা ছিল অস্বাভাবিক। তিনি বলেন, প্রায় কোনো খাবারই ছিল না, কোনো নিরাপদ জায়গাও ছিল না। এর চেয়েও খারাপ ছিল, আমরা জীবিতও বোধ করতাম না, মৃতও বোধ করতাম না।
এছাড়া, ওহানা যুদ্ধবিরতির সমাপ্তি সম্পর্কেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ১৮ মার্চ, ইসরায়েলি সরকার গাজায় বিমান হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। এই হামলায় আমাদেরও মৃত্যু হতে পারত।
ইসরায়েলি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
ভিডিওতে বোহবট ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই সরকার আমাদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দিয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে। যেসব জিম্মি আগে আমাদের সঙ্গে ছিল এবং এখন মুক্তি পেয়েছে, তাদের কথা বলার ও মত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হোক। তাদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করা বন্ধ করুন। সত্য প্রকাশিত হোক।
বোহবট এরপর মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মি ওহাদ বেন আমির উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, তুমি কেন সত্য বলছ না? তুমি আমাদের সঙ্গে ছিলে।
জিম্মি এলকানা বোহবটের অবস্থা
বোহবট অ্যাজমার রোগী এবং ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, তিনি গাজার অমানবিক পরিবেশে বন্দি রয়েছেন। চ্যানেল ১২ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্দি অবস্থার নোংরা পরিবেশের কারণে তিনি গুরুতর চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
এক মুক্তি পাওয়া জিম্মি জানান, বোহবট কোনো চিকিৎসা পায়নি এবং ৩০ মিটার গভীর একটি সংকীর্ণ সুড়ঙ্গে পাঁচজন বন্দির সঙ্গে রাখা হয়েছিল। জায়গার অভাবে তারা ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারতেন না এবং ছত্রাকযুক্ত স্যাঁতসেঁতে চাদরের ওপর ঘুমাতেন।
জিম্মি যোশেফ-হাইম ওহানার
কিরিয়াত মালাখির বাসিন্দা যোশেফ-হাইম ওহানা পাইলট প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে তার বন্ধুদের নিয়ে নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যালে অংশ নেন। তার বন্ধু ড্যানিয়েল শরাবি বলেন, সকালেই উৎসবে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু ওহানা রাতে যেতে চেয়েছিলেন। আকস্মিকভাবে উৎসবের সংগীত বন্ধ হয়ে যায় এবং সাইরেন বাজতে শুরু করে। বন্দুকধারীদের হামলা শুরু হলে তারা আহতদের সহায়তা করতে থাকেন।
ওহানার মা জানান, ওহানা ও তার বন্ধু এক মেয়েকে সাহায্য করতে গিয়েছিল, তখনই আরপিজি হামলা শুরু হয়। শরাবি বলেন, আমি ওহানাকে একটি গাড়ির আড়ালে দাঁড়াতে দেখেছিলাম। হঠাৎ সে উঠে দাঁড়াল, তারপরই নিচে পড়ে গেল। তাকে আরপিজি দিয়ে আঘাত করা হয়।
এরপর হামাসের প্রকাশিত ভিডিওতেই প্রথম দেখা যায়, সশস্ত্র বাহিনী ওহানাকে ধরে নিয়ে গাজায় নিয়ে যাচ্ছে।
এই ভিডিওটি জিম্মিদের কঠিন পরিস্থিতি এবং ইসরায়েলি সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে। এতে বোঝা যায়, বন্দি থাকা অবস্থায় তারা নিপীড়ন ও অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটিয়েছেন এবং তাদের মুক্তি পাওয়া সহযোদ্ধাদের কাছে সত্য প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন